গত ৮ বছরে হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে আজম

নির হোসেন জীবন,ঢাকা: পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত ৮ বছরে প্রায় হাজারেরও বেশি তরুণী- কিশোরীকে দুবাইয়ে হোটেলে চাকরী দেয়ার নামে বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র।
তিনি বলেন, নারী পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশের মূলহোতা আজমও তার দুই সহযোগীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মূলহোতা আজম, ময়না ও মো. আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড।এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থাকার অডিও ক্লিপ ইতিমধ্যে সিআইডি উদ্ধার করছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এসব তথ্য জানান।
এসময় প্রেসব্রিফিংয়ে সিআইডির বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন।
সিআইডি প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদেরকে জানান, আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যরা প্রথমে হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০ থেকে ২২ বছরের তরুণী কিশোরীদের প্রলুব্ধ করা হতো।এর পর তারা বিশ্বস্ততা অর্জনে ওই তরুনীদেরকে মাসিক বেতন হিসেবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধও করা হতো।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, দুবাইয়ে যাওয়া-আসা বাবদ সব ধরনের খরচও দিত দালাল চক্র। কিন্তু দুবাই যাওয়ার পর তাদেরকে হোটেলে জিম্মি করে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসাসহ ডান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। দুবাই ড্যান্স ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের গড ফাদার আজম ও তার সহযোগীদের আটকের পর তারা ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের মূলহোতা আজম এর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলার তথ্য পেয়েছি। যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, গত আট বছরে এভাবে প্রলুব্ধ করে দুবাইয়ে চাকরি দেয়ার নামে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারেরও বেশি তরুণী কিশোরীকে দুবাইয়ে পাচার এবং তাদের দেহ ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করেছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রটি। আর এই চক্রটির বাংলাদেশের মূলহোতা হলো আজম।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদেরকে বলেন,দুবাইতে এ চক্রের গডফাদার আজমের তারকাবহুল বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছি। সে ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক। এরমধ্যে তিনটি হচ্ছে ফোর স্টার একটি থ্রি স্টার মানের। তিনি বাংলাদেশে অর্ধশত দালালের মাধ্যমে কিশোরী অথবা ২০-২২ বছরের মেয়েদের উচ্চ বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতো।
যারা দালালি করতো তাদেরকে কী পরিমাণ টাকা দেয়া তো জানতে চাইলে সিআইডির প্রধান বলেন, দেশের সহযোগী দালালরা প্রতিটি মেয়ের জন্য ১০ হাজার করে টাকা পেত। আর ভিকটিমদের অগ্রিম বেতন দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতো। দুবাই পর্যন্ত ভিকটিমদের যাওয়া খাওয়া থাকার সব খরচ দালাল চক্র পরিশোধ করতো। অগ্রিম বেতন হিসেবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতো মূলহোতা আজম।
কি ভাবে নারীদেরকে দেশ থেকে পাচার করা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দালালরা মেয়েদের প্রলুব্ধ করে নির্ধারিত দুটি বিদেশি এয়ারলাইন্স এজন্সির মাধ্যমে দুবাই পাঠাত। দুবাই যাওয়ার পরে তাদের প্রথমে ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। আটকে রাখা হতো, খাবার দেয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।কিন্তু দুবাই ড্যান্সবারে হোটেলে নেওয়ার পর তাদের আর বেতন দেয়া হতো না।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান জানান, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুবাই সরকার দূতাবাসকে জানিয়ে চক্রের গডফাদার আজমের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশে ফেরত পাঠায়। দেশে ফেরার পর আজম আত্মগোপনে যায়। বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে। নতুন পাসপোর্ট করে সে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করে। তবে, তার আগেই ময়না ও মো. আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড নামে তার দুই সহযোগীসহ সিআইডির চৌকস দল তাকে আটক করে।
জিঞ্জাসাবাদে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের গডফাদার আজম সিআইডির কাছে স্বীকার করেছে, গত আট বছরে সে বাংলাদেশ থেকে হাজারেরও বেশি তরুণীকে দুবাই পাচার করেছে।
এ বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে গত ২ জুলাই রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা করেছে, যা সিআইডি তদন্ত করছে।
পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...