নড়াইলে করোনা সংকটের মধ্যেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুভার্ব

শরিফুল ইসলাম, নড়াইল: নড়াইলে করোনা সংকটের মধ্যে এবার শুরু হলো ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুভার্ব। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০জুলাই লোহাগড়া উপজেলার পাচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সহকারী পুলিশ সুপার (অব) শরীফ মোস্তফা কামাল (৭৫) মারা গিয়েছেন। এদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবে জেলার সর্বত্র চা-এর দোকানগুলোতে চালু হওয়া প্লাষ্টিকের ওয়ান টাইম কাপ যত্রতত্র পড়ে থাকায় এসবের মধ্যে বৃষ্টির পানি ভরে ডেঙ্গু রোগের বাড়তি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনও তেমন কোনো প্রস্তুতি গ্রহন করেনি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হবার পর থেকে নড়াইলে চা-এর দোকানগুলোতে করোনা সংক্রমনের ভয়ে কাঁচের কাপের প্রচলন বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার সর্বত্র চা-এর দোকানগুলোতে চালু হয়েছে প্লাষ্টিকের ওয়ান টাইম কাপ, যা প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ পিচ বিক্রি হচ্ছে। পরিত্যক্ত এসব কাপ অপসারণ না করায় যত্রতত্র পড়ে থাকা এসব খালি কাপের মধ্যে বৃষ্টির পানি ভরে ডেঙ্গু রোগের বাড়তি ঝুঁকি ও দূষণ বাড়াচ্ছে।
নড়াইল শহরের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন পাইকারী দোকানগুলো থেকে কমপক্ষে ১লাখ প্লাষ্টিকের চায়ের কাপ বিক্রি হচ্ছে। ক’দিন পূর্বে প্রায় ২লাখ কাপ বিক্রি হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমিন জানান, এ বছর লোহাগড়া হাসপাতালে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৭জন রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শরীফ মোস্তফা কামাল প্রথম ডেঙ্গু জ্বরে মারা গিয়েছেন। গত বছর ঢাকা থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বেশী হলেও এবার স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কিত দু’টি চিঠি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলার তিন পৌর মেয়রের কাছে কাছে পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সাকুর বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগি ভর্তি না হওয়ায় সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়নি। রোগি আসলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা করা হবে। করোনা মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সেইভাবে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়নি। তবে ডেঙ্গু শনাক্তে কিটের ব্যবস্থা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন,বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র, সরকারি/বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার পাশের ঝোপ-ঝাড়, জলাশয়, ড্রেন, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান সফল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি এ কাজে প্রত্যেক ব্যক্তি ও পরিবারকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৭ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৪শ ডেঙ্গু রোগি চিকিৎসা নেয়। এসব রোগির মধ্যে প্রথমাবস্থায় অধিকাংশই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হলেও পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবেই বেশী আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গত বছর সরকারি হিসেবে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে কেউ মারা যায়নি। তবে ডেঙ্গু উপসর্গে ২জনের মৃত্যু হয়। গত বছর প্রথাবস্থায় ডেঙ্গু শনাক্তে কিটের অপ্রতুলতা দেখা দিলে নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজস্ব অর্থায়নে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজারের বেশী কিটের ব্যবস্থা করে দেন।

পিবিএ/শরিফুল ইসলাম/এসডি

আরও পড়ুন...