‘কষ্ট করি ঘর বানাইছি, বানের পানিত সেই ঘর ভাঙ্গি গেইছে’

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লালমনিরহাট: “কত কষ্ট করি ঘর বানাইছি। বানের পানিত সেই ঘর ভাঙ্গি গেইছে। ঘরে বড় বড় খাইল (গর্ত) হইছে। এবারের মত বান (বন্যা) ৪০ বছরেও দেখি নাই। হামার খবর কায়ো নেয় না বাহে” এভাবে কান্না জরিয়ে কথা গুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের ছকিনা বেগম।

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী জনপদ লালমনিরহাটে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তিস্তাপাড়ে বন্যার উন্নতি হলেও অবনতি ঘটেছে ধরলা পাড়ে।

তবে টানা পানিবন্দি থাকায় বন্যাকবলিতদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার স্রোতে ভেঙে গেছে ঘর বাড়ির বেড়াসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। পানির প্রচণ্ড স্রোতে অনেকের ঘর বাড়ির ভেতরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব মেরামত করতেও এক সপ্তাহ কেটে যাবে। পানি কমলেও ভাঙন আতঙ্কে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তার বাম তীরের প্রতিটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। ত্রাণ নয়, নদী খনন করে দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের। তারা স্থায়ী ভাবে ভালোবাসার নীড়ে আপন ঘরে থাকার নিশ্চয়তা চান।

অপরদিকে ধরলা নদীর পানি মঙ্গলবার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে ধরলা পাড়ে। বন্যা কবলিতদের দুর্ভোগ চরম পর্যয়ে পৌঁছেছে। শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।

সোমবার(১৩ জুলাই) সকালে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামে ঘুমন্ত মায়ের কোল থেকে বন্যার পানিতে পড়ে ৮ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্য হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রুপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে আগামী এক/দুই দিন উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় বন্যার উন্নতি ঘটেছে। তবুও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জিআর ও ভিজিএফ মিলে এক হাজার ১৯০ মেট্রিকটন চাল, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২২ লাখ ২৫ হাজার ৭শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০২টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...