লক্ষ্মীপুরে পানিতে রোগমুক্তির নেপথ‌্যে যুবলীগ নেতার স্বপ্ন

অ আ আবীর আকাশ,লক্ষ্মীপুর: দুই বছর আগের ঘটনা। রাতে নামাজ পড়ে ঘুমাচ্ছিলেন রাশেদ। ঘুমের মধ‌্যে স্বপ্ন দেখেন বাড়ির পিছনের ডোবার পানি পান করলে ও তাতে গোসল করলে যে কোনো রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।

বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান‌্য ব্যক্তিসহ এলাকাবাসীকে জানাতে স্বপ্নের মধ‌্যে কেউ তাকে আদেশ দেন। অন্যথায় তার ক্ষতি হতে পারে বলে হুশিয়ারিও দেওয়া হয়।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সহিদপুর গ্রামের সাদুল্লা হাজী বাড়ির মৃত মাহবুবুল ইসলামের ছেলে রাশেদ হোসেন। তিনি উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রাক্তন সভাপতি।

রাশেদ হোসেন বলেন, ‘স্বপ্নের কথা পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। ইমামের মাধ্যমে কয়েকটি মসজিদে জুম্মা’র নামাজ পরবর্তীতে মুসুল্লিদের জানানোর ব‌্যবস্থা করেছি। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে কয়েকজন লোক পানি পান করেছেন। তবে আমি নিজে সবসময় ওই ডোবার পানি পান করি ও গোসল করি।’

রাশেদ দাবি করেন, ‘ডোবাটির পানি পানে করোনা অথবা নির্দিষ্ট কোনো রোগ মুক্তি মিলবে, এমন কথা কখনও প্রচার করিনি।’

রাশেদের মা রেহানা আক্তার বলেন, ‘ছেলেকে তার স্বপ্নের কথা প্রচার করতে নিষেধ করেছি। সে তবুও মানুষকে জানিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ডোবার পানি পান করতে ও নামাজ পড়ার ব‌্যাপারে তাগিদ দিয়ে আসছে। তাকে অসুস্থ ভেবে চিকিৎসা করিয়েছি। তবুও থামছে না। রাশেদ বলে- স্বপ্নের কথা প্রচার না করায়, ছায়া হয়ে কেউ তার ক্ষতি করতে আসছে। কিন্তু লোকলজ্জা ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বপ্নের কথাটি কাউকে বলতে পারছি না। একারণে সদগাহ হিসেবে কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসায় নগদ অর্থ দান করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাছ চাষ করার জন্য বাড়ির পিছনে ডোবাটি খনন করেছিলাম। পাইপের মাধ্যমে বাড়ির ট্যাংকিতে পানি তোলার জন্য ওই পুকুরে একটি মোটর পাম্প স্থাপন করি। কিন্তু ওই পাম্প দিয়ে পানির বদলে গ্যাস আসে। পরে অন্য পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংগ্রহ করে তা রান্নার কাজে ব্যবহার করি। দেড় বছর পর চুলায় গ্যাস না আসায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দিই। এরপর থেকেই পুকুরে অনবরত বুদবুদ নির্গত হয়। তবে গ্যাস ওঠার ঘটনাটি প্রশাসনের কাউকে জানানো হয়নি।’

রেহানা আক্তার বলেন, ‘সম্প্রতি উদেশ্য প্রণোদিতভাবে কে বা কারা ওই ডোবার পানি পান ও গোসলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে বলে গুজব ছড়িয়েছে। এসবের কিছুই আমরা জানি না। এই ধরনের কথা আমার পরিবারের কোনো সদস্য কখনও বলেনি। এছাড়া কখনো কাউকে পানি পান করতে বাধ্যও করিনি।’

অনেকেই ডোবাটি থেকে পানি পান করেছেন। এতে রোগমুক্তি বা কারও ক্ষতি হতেও শোনেননি স্থানীয়রা। অনেকেই বিষয়টিকে ভুয়া ও গুজব বলে আখ্যায়িত করছেন।

এদিকে যুবলীগ নেতা রাশেদকে মানসিক রোগী ও মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন লাহারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মশু পাটোয়ারি।

চেয়ারম্যান মশু পাটোয়ারি বলেন, ‘অসুস্থ হওয়ার আগে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল রাশেদ। তখন তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। এখনও সুস্থ হয়নি সে। রাশেদ আজগুবি কথা বলে স্থানীয়দের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’

তবে স্বপ্নে দেখা সেই ডোবার পানি চেয়ারম্যান নিজেও পান করেছেন বলে জানান।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘ডোবার পানি পানে রোগমুক্তির বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে ডোবার ময়লা পানি পান করা থেকে বিরত থাকার জন্য। এরপরেও যদি কেউ মিথ্যা তথ্যটি প্রচার করে ও পানি পান করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, ‘ডোবায় দীর্ঘদিন থেকেই বুদবুদ উঠছে। কিন্তু ওই ডোবার পানি পানে রোগমুক্তির কথাটি গুজব। এই কথাগুলোর কোনো নূন্যতম বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। উল্টো ময়লা পানি পানে রোগ সংক্রমণের আশংকা রয়েছে।’

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...