বেদনাবিধুর শোকাবহ আগস্ট

পিবিএ,ঢাকা: বাঙালির শোকের মাস আগস্ট শুরু হলো। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকা-ের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের দিন। সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আগস্টকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে।
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট শেষ রাতে (১৫ আগস্ট) ঘাতকরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাকে সপরিবারে নিঃশেষ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, সদ্য বিবাহিত পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে সেখানে হত্যা করা হয়। বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় তার ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। তারা বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বাবা-মা।

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে শুনে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেন বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ। তবে ৩২ নম্বরের সামনে পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তারা তাকে প্রথমে বাধা দেয় ও পরে হত্যা করে। এছাড়া ওইদিন ৩২ নম্বরের বাড়িতে কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা- বিশ্বের বুকে নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনৈতিক হত্যাকা-ের উদাহরণ হয়ে আছে।

সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান।

শোকের মাস আগস্টব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শোকাবহ পরিবেশে শোকের মাস পালনের করতে এসব কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে।
১ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।

২ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্তদান ও প্লজমা সংগ্রহ কর্মসূচির শুরু করবে কৃষক লীগ। কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ ঈদুল আজহার নামাজের পর ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করেছে।

আগামী ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে এবং সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবে।

আগামী ৬ আগস্ট মহিলা আওয়ামী লীগ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ১০টায় তার কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সহযোগী সংগঠনগুলো এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবে। এছাড়া যুব মহিলা লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মৎস্যজীবী লীগ। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে ১১ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তবে এই অনুষ্ঠানের সময় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

এদিকে শোক দিবস উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট ৩ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী যুবলীগ ১৪ আগস্ট বনানী কবরস্থানে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে আছে- সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।

সকাল ১০ টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসবেক লীগ। এছাড়াও সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ সকল সাংগঠনিক ইউনিটে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কালো পতাকা উত্তোলন ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করবে।

১৮ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ। শোক দিবস উপলক্ষে ২০ আগস্ট যুব মহিলা আলোচনা সভার আয়োজন করছে। এছাড়াও একই দিন ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করছে যুলীগ।

গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে ২১ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে ২২ আগস্ট ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তাঁতী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ।

২৪ আগস্ট নারী নেত্রী বেগম আইভী রহমানের স্মরণে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ২৫ আগস্ট যুবলীগ, ২৬ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ, ২৮ আগস্ট ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে যুব মহিলা লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করবে।

২৯ আগস্ট ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের পলাতক আসামিদের দেশে ফেরত এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন (সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে) কর্মসূচির আয়োজন করবে মহিলা শ্রমিক লীগ। ৩০ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

পিবিএ/এইচএস

আরও পড়ুন...