যানবাহনের শব্দে নয় পাখির কলতানে মুখর বাসষ্ট্যান্ড

শামসুজ্জোহা সুজন,ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম): পড়ন্ত বিকেলে দুরের পশ্চিম আকাশ যখন আবির রাঙ্গা আল্পনায় ছেঁয়ে থাকে। অস্তমিত সূর্যকে আড়াল করে পৃথিবীকে আঁধারে ঢেকে দিতে সন্ধ্যা যখন সমাগত। পথচারীদের ঘরে ফেরার ব্যস্ততা যখন বেড়ে যায়। ভোঁ ভোঁ শব্দে ভেঁপু বাজিয়ে বাস, মিনিবাস, অটোরিকশা সহ হরেক রকমের যান্ত্রিক যানবাহন যখন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী বাসষ্ট্যান্ড থেকে শাঁই-শাঁই করে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে, তখন বাসষ্ট্যান্ডের একটি গাছ থেকে ভেসে আসে ক্ষুদ্রাকার এক প্রজাতির পাখির কলতান। অবতারণা হয় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের। যা ক্ষণিকের জন্য পথচারীদের ক্লান্তি দুর করে মনে ভালোলাগার আবেশ ছড়ায়। ক্ষুদ্রাকার পাখিগুলো দেখতে কিছুটা বাবুই পাখির মতো।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার ঠিক আগে আগে বাসষ্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকের বারো/তের ফুট উচ্চতার একটি জিগা গাছের ডাল-পালায় বসে শতশত পাখি কিচিরমিচির সুরে চারপাশ মুখরিত করে তোলে। অনেক সময় গাছের ডালপালায় জায়গা না পেয়ে পাখিগুলো পাশে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনের তারে সারি বদ্ধ ভাবে বসে আপন মনে সন্ধ্যার আগমনী গান শোনায় কর্ম ক্লান্ত ঘরমুখো মানুষদের। পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাখিগুলিকে বিরক্ত না করায় মানুষ ও পাখির মধ্যে এক ধরনের সহবস্থান গড়ে উঠেছে। প্রায় এক মাস যাবত পাখিগুলো এখানে অবস্থান করছে।

সকালে পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে চতুর্দিকে উড়ে যায়। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ঝাঁক বেঁধে ফিরে আসে জিগা গাছটিতে। তখন তাদের ডাকাডাকিতে মুখরিত হয় ওই এলাকা। রাতের আধাঁর বাড়তে থাকলে একসময় পাখিদের ডাকাডাকি থেমে যায়। আলাপচারিতায় এমনটাই জানান পাখিদের বর্তমান আবাসস্থাল জিগা গাছের নিচে পান-সিগারেট বিক্রেতা আমিনুর রহমান।

দৈনন্দিন জীবনে কাঠের চাহিদা পূরণ আর ফসলি জমির পরিমাণ বাড়াতে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলাতে পাখিদের আবাসস্থাল সংকট দেখা দিয়েছে এ কথা সত্য। তবে বাসষ্ট্যান্ডের মতো ব্যস্ততম এলাকার ছোট্ট জিগা গাছটিকে কেন পাখিগুলো তাদের আবাসস্থাল হিসেবে বেছে নিয়েছে তা নিয়ে পথচারী ও স্থাানীয়দের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। পাখি বিশেষজ্ঞ না থাকায় পাখিদের প্রজাতি ও নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব, অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ এবং প্রজনন ক্ষেত্রে সমস্যার কারণে অনেক সময় পাখিরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলে যেতে পারে, বাসষ্ট্যান্ডের গাছে আশ্রয় নেয়া পাখিদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকতে পারে মনে করেন ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের প্রাণি বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক শহিদুল ইসলাম।

পাখিরা কৃষকের বন্ধু, তাঁরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে এবং কীটনাশক ব্যবহার সীমিত করতে সাহায্য করে। ফসলের জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার শুধু যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর তা কিন্তু নয়, পাখির প্রজনন ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে। পাখিদের অনেক প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বনায়ন করা হলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক ভাবে যেমন লাভবান হওয়া যায় তেমনি পর্যাপ্ত গাছপালা থাকায় পাখিরা পায় তাদের নিরাপদ আবাসস্থাল। এতে রক্ষা পাবে বিপন্ন প্রজাতির পাখি, বৃদ্ধি পাবে পাখির সংখ্যা।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...