পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তোভোগী

পিবিএ,মহাদেবপুর (নওগাঁ): নওগাঁর মহাদেবপুর থানার ওসিসহ ছয়জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের “আইজিপি’স কমপ্লেন সেলে” অভিযোগ করে বিপাকে পড়েছে একটি পরিবার। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ভুক্তোভোগীকে এবং পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। গত ৩ মে উপজেলা সদরের কামাল ভিলার বাসিন্দা আবু সাঈদ মো. মুক্তাদির রশিদ আদরের স্ত্রী শর্মা আক্তার তুলি পুলিশি হয়রানীর বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল, ওসি (তদন্ত) সিদ্দিকুর রহমান, এসআই এরশাদ মিঞা, রতন কুমার রায়, খোকন কুন্ডু ও নূর ইসলামের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগের অনুলিপি রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এবং নওগাঁর পুলিশ সুপার বরাবর ইমেলে প্রেরণ করা হয়েছে। আইজিপি’স কমপ্লেন সেল এর হেল্প লাইলে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন। বর্তমানে অভিযোগটি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ‘ডিসিপ্লিন এন্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ এর ইন্সপেক্টর মাহতাব হোসেন এর নিকট তদন্তাধীন রয়েছে।

 

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শর্মা আক্তারের স্বামী আবু সাঈদ মো. মুক্তাদির রশিদ আদর ‘প্রথম আলো’ ব্লগের জনপ্রিয় ব্লগার হিসেবে পরিচিত। তিনি পুলিশের ইতিবাচক কর্মকান্ড এবং দুর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি মহাদেবপুর থানায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক ও কয়েকজন পুলিশ উপ-পরিদর্শক এর তদন্তাধীন মামলার রাইটার হিসেবে কাজ করেন। দিনদিন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ও বিভিন্ন জটিলতার কারনে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেও যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। তার (আদর) ছেলে অসুস্থ্য থাকায় ওসি (তদন্ত) সিদ্দিকুর রহমানের তদন্তাধীন মামলা হাল-নাগাদ (আপডেট) করে দিতে না পারায় তিনি খারাপ আচরণ করেন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

এতে আদর মামলা লিখতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ কারনে গত ২৯ মার্চ রাত ৯ টার দিকে আদরকে গ্রেফতার করার উদ্দেশ্যে এসআই এরশাদ মিঞা, রতন কুমার রায়, খোকন কুন্ডু, নূর ইসলামসহ কয়েক জন পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশী করে; ডাকাতিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখায়। এসময় আদরকে বাড়িতে না পাওয়ায় এসআই এরশাদ মিঞা দুই সন্তানের সামনে তার স্ত্রীকে অশ্লীল ইঙ্গিত প্রদর্শনসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর এক পর্যায়ে এসআই খোকন কুন্ডু আদরের স্ত্রী ও সন্তানদের হুমকি প্রদর্শন করেন। পুলিশের এমন আচরণে স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান ভয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং এখনো ঘুমের মধ্যে আতকে ওঠে। বাড়ি তল্লাশী করা এবং আদরকে খোঁজ করার বিষয়ে পুলিশের কাছে তার স্ত্রী জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, ফেইসবুকে পুলিশকে নিয়ে সমালোচনামূলক পোষ্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তারা আদরকে গ্রেফতার করতে এসেছেন।

আদরের স্ত্রী শর্মা আক্তার তুলি বলেন, ‘কয়েকজন পুলিশের কারনে করোনা’র এই দূর্যোগময় সময়ে আমার স্বামীকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দেশের কোন থানায় মামলা বা অভিযোগ নেই এবং তিনি কোন প্রকার অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ১২ মে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. রকিবুল আক্তার অভিযোগ তদন্তের জন্য মুঠোফোনে আমাকে মহাদেবপুর সার্কেল অফিসে যাওয়ার জন্য বলেন। ছেলে পরশ ও মেয়ে ছোঁয়াকে নিয়ে সার্কেল অফিসে উপস্থিত হই। সেখানে আমার লিখিত জবানবন্দী গ্রহণ না করে উল্টো আমার (অভিযোগকারী) মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। কিন্তু আমাকে জব্দ তালিকা দেওয়া হয়নি।’

 

ভুক্তোভোগী আবু সাঈদ মো. মুক্তাদির রশিদ আদর বলেন, ‘অভিযোগ দায়েরের পর থেকে পুলিশ একাধিকবার সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে আমি পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরোক্ষভাবে সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদানে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছে পুলিশ এবং ডিপার্টমেন্ট তাদের পক্ষ নেবে-এমন বক্তব্য প্রদান করেছেন। তাদের এমন দম্ভোক্তিতে মর্মাহত হয়েছি- তারা বলেন যে, পুলিশের সাথে কেউ লেগে পেরে উঠেনি। এমন বক্তব্য পুলিশ ও জনতার মাঝে দেয়াল তৈরির জন্য যথেষ্ট এবং জনতার পুলিশ হয়ে উঠার পথে বড় বাঁধা।’

আদরের স্ত্রীকে অশ্লীল ইঙ্গিত প্রদর্শন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই এরশাদ মিঞা বলেন, ‘অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ আদরের স্ত্রী ও সন্তানদের হুমকি প্রদর্শন করার বিষয়ে এসআই খোকন কুন্ডু বলেন, ‘ফেইসবুকে পোষ্ট করাকে কেন্দ্র করে আমরা ওইদিন আদরকে খুঁজতে তার বাড়িতে গেছিলাম। সে বাড়িতে না থাকায় আমরা চলে এসেছি। কাউকে কোনো হুমকি দেওয়া হয়নি।’
অভিযোগকারীর মোবাইল ফোন জব্দ করা ও লিখিত জবানবন্দী গ্রহণ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. রকিবুল আক্তার বলেন, ‘মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

এ বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ওসি (তদন্ত) সিদ্দিকুর রহমানের বক্তব্য গ্রহনের জন্য একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘এটি তদন্তাধীন বিষয়। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ‘ডিসিপ্লিন এন্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ (রাজশাহী) এর ইন্সপেক্টর মাহতাব হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’ এ ব্যাপারে নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

আরও পড়ুন...