ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন এমএলই অনলাইন স্কুল

পিবিএ,খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এমএলই অনলাইন স্কুল এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে। জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র আয়োজনে এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান ও উপকরণ উন্নয়ন কর্মশালায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আরো বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি করোনার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় সরকার শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত রাখার জন্য নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছে। সংসদ টিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালনা তার মধ্যে অন্যতম। সরকার ২০১৭সাল থেকে দেশের পাঁচটি বিভিন্ন জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২০সালের মধ্যে ইতোমধ্যে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক মাঠে বিতরণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ করোনা চলাকালে যাতে বিভিন্ন ভাষাভাষি শিশুদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তার জন্য উদ্যোগী ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী মিলে এমএলই অনলাইন স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটি অত্যন্ত উপযোগী।

পার্বত্য জেলা পরিষদেরই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। দেরীতে হলেও উদ্যোগটি গ্রহণ করায় তিনি উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানান এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি উত্তরণ করার পরও অনলাইনে পঠন-পাঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তাই, এই উদ্যোগটিকে দীর্ঘ মেয়াদী উদ্যোগ হিসেবে এগিয়ে নিতে সকলকে স্বত্বস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি অনলাইন স্কুলের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

শনিবার(২২আগস্ট) খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি উন্নয়নকর্মী ও জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্স্ট্রাক্টর রিন্টু কুমার চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিন্টু কুমার চাকমা বলেন, এ বছরের ১৭ই মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উদ্যোগী কিছু শিক্ষক নিজস্ব উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম প্রচার শুরু করেন। পরবর্তীতে সকল উদ্যোগী শিক্ষকদের একত্রিত করে ‘এমএলই অনলাইন স্কুল’ নামের একটি সেমি-ফর্মাল স্কুলিং কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে, আমাদের এই উদ্যোগের ব্যাপারে অবহিত করার সাথে সাথেই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান আমাদের এই কার্যক্রমকে সহায়তা করার এবং নিজেও প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য সদয় সম্মতি প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রচারের জন্য ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সময় আমাদেরকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। লাইটিং থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ঘাটতি ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান মহোদয়ের সহযোগিতায় সেই সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়েছে। পরবর্তীতে আরো কোয়া

লিটি সম্পন্ন রেকর্ডিং নিশ্চিত করার জন্য অদূর ভবিষ্যতে একটি রেকর্ডিং স্টুডিও স্থাপন করা সম্ভব হলে অনলাইন ক্লাস পরিচালনার কার্যক্রম আরো বেগবান হবে বলে তিনি প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, দেশের সকল শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, ও সাদরি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম তার মধ্যে অন্যতম। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর সরকারের এই উদ্যোগে কিছুটা ভাটা পড়ে। সে কারণেই এমএলই অনলাইন স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমে যেসব শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ভাষা বিশেষজ্ঞ, আইসিটি বিশেষজ্ঞ সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাঁদের সকলের কাছে এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর সারা পৃথিবীর সর্বত্র অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীও এখন ঘরে বসে নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়া যে কভিডোত্তর পৃথিবীতেও অব্যাহত থাকবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই, এই প্রক্রিয়াকে টেকসই করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। পার্বত্য জেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান আমাদের এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আমাদের এই আকাঙ্খাকে তরান্বিত করেছেন। তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর প্রতি উদ্যোক্তাদের পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পরে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১১সদস্যবিশিষ্ট এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সদস্যবৃন্দ হলেন- সভাপতি হলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-কংজরী চৌধুরী, সহ-সভাপতি-জাবারাং কল্যাণ সমিতি নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক-খাগড়াছড়ি সদর ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর রিন্টু কুমার চাকমা, সহ-সাধারণ সম্পাদক-জাবারাং কল্যাণ সমিতি কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা, অর্থ সম্পাদক-দীঘিনালা উপজেলার শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) সুস্মিতা ত্রিপুরা, সহ-অর্থ সম্পাদক-পানছড়ি উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সঞ্চয়ন চাকমা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক-খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা, সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক-রামগড় উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার উম্রাচিং মারমা, নির্বাহী সদস্য-খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আশাপ্রিয় ত্রিপুরা, শুকনাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ক্যহলাসাই চৌধুরী, বাউড়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সন্দ্বীপন চাকমা।

পিবিএ/চাইথোয়াই মারমা/এসডি

আরও পড়ুন...