জোয়ারের পানিতে এলোমেলো রামগতি উপকূল

পিবিএ,লক্ষ্মীপুর: টানা আট দিনের বৃষ্টির ফলে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরাঞ্চাল ও নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, অমাবস্যা এবং ঝড়োহাওয়ার প্রভাবে টানা আট দিনের বৃষ্টির মেঘনায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেড়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।এতে উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী এলাকা এবং চরাঞ্চলের এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, জোয়ারের পানির স্রোতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়াসহ কয়েক হাজার একর রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের টাংকি বাজার তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে,বেড়ীর আসে পাশে থাকা নিম্মআয়ের সাধারণ মানুষের শত শত যাযাবর, জেলেদের ঘরবাড়ি, বনবিভাগের গাছ পালা জোয়ারের পানিতে রাক্ষুসী মেঘনা নদীতে তলিয়ে নিয়ে গেছে।এতে সাধারণ মানুষের হাহাকার, কৃষকের কান্নায়, আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে।

নেই কোন খাবার, দিকবিদিক ছুটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ একটু আশ্রয়ের সন্ধানে, দুই মুঠো অন্নের জন্য মেহনতি কৃষক,জেলে,বেদেনী, পরিবার, যাযাবর,ও সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি পক্ষ থেকে, কোন সাহায্য করতে দেখা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান,বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ, অমাবস্যা এবং ঝড়োহাওযার প্রভাবে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেড়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।

এতে বেড়ীবাঁধ না থাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী বালুরচর,সুজনগ্রাম,টাংকি বাজার ,জনতা বাজার, মুন্সীরহাট,বাংলাবাজার ,আসলপাড়া, আলেকজান্ডার, সেবাগ্রাম, গাবতলী , চরআলগী, বড়খেরী , চরগাজী , চরগজারিয়া , চর মুজাম্মেল ও তেলিরচরসহ নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে এসব এলাকার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের চরগজারিয়ার চেয়ারম্যান বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তছলীম উদ্দিন জানান, জোয়ারের পানিতে এই চর এলাকার চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া পানির তোড়ে বাজারের দোকানঘর ওমালামালের ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকার কয়েকশ একর সদ্য রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানি বসতঘরে ঢুকে যাওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।

চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নটি চারদিকে মেঘনা বেষ্টিত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার এখনো তিন ফুট পানির নিছে তলিয়ে রয়েছে। জোয়ারের স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মালামালসহ দোকারঘর ও বসতঘর।

রামগতি উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ পিবিএকে বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চরগাজী ইউনিয়নের, টাংকি বাজার ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে মেঘনা জোয়ারের পানি ঢুকে বেড়ীর আশেপাশে থাকা ৫ শত পরিবারের ঘরবাড়ি, বন বিভাগের, হাজার হাজার গাছপালা ভেঙ্গে রাক্ষুসী মেঘনা নদী উজার করে নিয়ে গেছে। এতে বেড়ীবাঁধ পাশে থাকা শত শত মানুষ নিঃস্ব হয়েছে, কৃষকের ধান, গম, সোয়াবিন, চাষীদের কোটি কোটি টাকার মাছ জোয়ারের পানির সাথে মিশে গেছে, পোল্ট্রি খামারের, হাজারো মুরগি মারা গিয়েছে, এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

রবিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আব্দুল মোমিন পিবিএকে বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর জনপ্রতিনিধিদেরকে এলাকাবাসীর পাশে থাকার জন্য বলা হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

পিবিএ/আলমগীর হোসেন/এসডি

 

https://youtu.be/ZLDC07AkjLE

আরও পড়ুন...