পাহাড়ের চূঁড়ায় তিত করলা চাষে কৃষকের মুখে হাসি

রিমন পালিত,বান্দরবান: পার্বত্য জেলা বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বুক জুড়ে প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ে এবার তিত করলা সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে। বদলে দিয়েছে এখানকার ৫ শতাধিক কৃষকের ভাগ্য।

চাষের ওপর গুরুত্বারোপ ও ফলন ভালো হওয়ায় এ সবজি চাষ তাদের জীবন প্রবাহকে সচল করে দিয়েছে।

অধিকাংশ চাষিরা এখন পাহাড়ের সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বান্দরবানের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাহাড়ে উৎপাদিত সবজি রফতানি করা হচ্ছে।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাহাড়গুলোতে তিত করলা করলা প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষকরা জানান।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, চিম্বুক পাহাড়ের পাশে বিভিন্ন পাহাড়ে প্রায় দেড় শতাধিক উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়া, ঢাল, ও পাদদেশে কৃষকরা ব্যাপক হারে তিত করলা সবজি চাষ করেছেন।

পাহাড়ি ভূমি উর্বর ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি সবজি ক্ষেতে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। তবে এবার কৃষকরা তিত করলার বেশি ফলন পাচ্ছেন। তিত করলা বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে প্রতিমণ ৮০০ টাকা ।

ওয়াই জংশন ও চিম্বুক সড়কের পাশে ৭ নং ওয়ার্ডের দেওয়া হেডম্যান পাড়া এলাকার একটি পাহাড়ের ঢালুতে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে কৃষকরা তিত করলা চাষ করেছেন।

কৃষক রাওরিং মুরং (৩৫) এখানের পাহাড়ের প্রায় দেড় একর জমিতে তিত করলা চাষ করেছেন। তিনি বলেন তার সকল সবজির মধ্যে করলার বাম্পার ফলন হয়েছে। পরিবারের সকল সদস্য মিলে পাহাড় আবাদ করে তিনি এ চাষ করেছেন। পাহাড় পরিষ্কার করে দিয়ে তারা বেশ কয়েক পরিবার সে জমিতে বিভিন্ন তরি তরকারীর চাষ করেছেন। তবে করলার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ চাষে তাদের ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিনই ১শ’ থেকে ১৫০ কেজি করে করলা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে জমিতে যে ফলন আছে তাতে আরো ৫০-৬০ হাজার টাকার করলা বিক্রি হবে।

আর এক কৃষক রুইমা মুরং জানান আমি পাহাড়ে আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে করলা চাষ করতাম । প্রথম প্রথম আমাদের বান্দরবানের স্থানীয় হাট-বাজারে এ ফসল বিক্রি করতাম। পরে করলা চাষে লাভবান হওয়া যায় সব জায়গা জুড়ে এই করলা চাষ করি। আমাদের এই করোলা নেওয়ার জন্য এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসে । ফলে করলা চাষ করে লাভবান হন চাষিরা। তিতা করলাই হাসি ফুটিয়েছে আমাদের দুর্গম পাহাড়ে বান্দরবানের সকল কৃষকের মুখে।

এসময় তিনি জানায়, বন্যহাতি একাধিকবার তাদের ফসল নষ্ট করার কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি পাহাড়ের পতিত জমিতে সবজি চাষের জন্য ঋণ সুবিধাসহ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা গেলে বান্দরবানের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কৃষকেরা অন্যত্র বিক্রি করে নিজেরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন।

বান্দরবানের পাহাড়ে তিতকরলা সবজি সহ অন্যান্য সবজি চাষের বিষয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এবার ১২১৭ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে সবজির চাষ হয়েছে এবং তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ভাবে কৃষকরা তিত করলা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার তিত করলাসহ সকল ধরনের সবজির ফলন ভালো হয়েছে। এজন্য কৃষকরা সবজি চাষে অত্যন্ত খুশি।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...