কালাইয়ের মাটিতে বিদেশি তরমুজ চাষ

আবুবকর সিদ্দিক,জয়পুরহাট: বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে খ্যাত ও ধান-আলুর উৎপাদনের জন্য জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা পরিচিত প্রাচীনকাল থেকেই। তবে নতুন করে, নতুন ভাবে উপজেলায় এই প্রথম ও বড় পরিসরে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষের ব্যাপক সফলতার দ্বার খুলে দিয়েছে উপজেলার বহুতিদর্গাপাড়ার বর্গা চাষী এনামুল হক। তিনি ৩৩শতক জমি বর্গা নিয়ে নিজস্ব উদ্দ্যোগে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করেন। বর্তমান তার কাঙ্খিত ছোট-বড় কয়েকশ তরমুজ মাচায় মাচায় গাছের ডোগায় ডোগায় ঝুলে বাতাসে দুল-ঝে। তিনি নতুন জাতের এই তরমুজ চাষের সফলতা আনায় এলাকায় অনেক কৃষক চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালাই সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর দিকে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের বহুতিদর্গাপাড়া। সেই পাড়াই বর্গা চাষী এনামুল হক নিজস্ব উদ্দ্যোগে ৩৩শতক বন্যামুক্ত ও উচু জমিতে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী বলা হয়। কিন্তু উষ্ণ অঞ্চল হওয়ায় এই উপজেলায় কোথাও রসালো ফল তরমুজের চাষ হয় না। এরপরও রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমি হিসেবে খ্যাত কালাইয়ে এই প্রথম বিদেশী তরমুজ চাষ করে সফল কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন এনামুল হক।

তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে গত জুন মাসে ২৪ তারিখে তার জমিতে প্রায় ১হাজার ৩শটি বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজের বীজ রোপণ করেন। তার নিবেদিত চেষ্টা, শ্রম, আর ঘামের প্রতিফলন সুরভিত হয়ে কাঙ্খিত ছোট-বড় কয়েকশ তরমুজ মাচায় মাচায় গাছের ডোগায় ডোগায় ঝুলে বাতাসে দুলঝে। বিষ ও ফরমালিন মুক্ত পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ তরমুজগুলোর রং হলুদ, খেতে সু-স্বাদ, দেখতে আকর্ষণীয় ও চাহিদা বেশি, ভালো দাম থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় এই জাতের তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করেন অনেকেই।

উপজেলার বহুতিদর্গাপাড়ার বর্গা চাষী এনামুল হক বলেন, ৩৩শতক জমি বর্গা নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী সেখানে ২২টি বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি। এরপর জুনে ২২ তারিখে ১৮ ইঞ্চি পর পর বিদেশী তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজের বীজ রোপণ করি। বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের প্রায় ২৪শ তরমুজ। ঐ তরমুজ কাটলে ভিতরে লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সু-স্বাদ।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি এই মাসেই সব তরমুজ বিক্রি হবে। বর্তমান বাজারে এই তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি, দামও ভালো আছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১শ টাকায় বিক্রি হবে। এই পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। এতে সব কিছু খরচ বাদ দিয়ে আমার আয় হবে প্রায় ২ লাখ ১৫হাজার টাকা।

স্থানীয় কৃষক নুরুল মিয়া ও আব্দুল খারেক জানান, এনামুলের অসময়ে তরমুজ চাষ দেখে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু তরমুজ চাষের ফলন ভালো ও স্বাদ ভালো হাওয়ায় এখন অনেকেই চাষ করতে তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। এনামুলের মতো তারাও এখন ভাবছেন, ঐ জাতের তরমুজের চাষ করবেন। তার তরমুজ দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এক নজর দেখতে আসেন। আবার কেউ কেউ তরমুজ কিনছেনও।

উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জেবা বলেন, এই উপজেলার কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী। ধান ও আলুর চাষাবাদ ছাড়াও অনেক ধরনে ফল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় সেই চেষ্টাই আমরা এলাকায় একটি আধুনিক তরমুজ চাষ সৃষ্টি করেছি। সেই তরমুজ চাষ করে বর্তমান আমরা সফল হয়েছি। সেই সঙ্গে ঐ তরমুজ নিয়ে এলাকার সকল কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাছাড়া এলাকাতে পুষ্টি চাহিদা পূরনের পাশাপাশি এনামুল হক অর্থনৈতিক ভাবে অনেক স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। তার এই সফলতা গড়ে তোলার জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বাত্নক সহযোগিতা করে আসছে।

পিবিএ/জয়পুরহাট/এসডি

আরও পড়ুন...