ইউএনওর বাসায় সিসি ক্যামেরায় যা ধরা পড়ল

পিবিএ,দিনাজপুর: দুর্বৃত্তদের হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে নিরাপত্তাপ্রহরীকে আটকে রেখে এ হামলা চালানো হয়। প্রচণ্ড আঘাতে ওয়াহিদার মাথার খুলির হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়।

ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এতে দুজন দুর্বৃত্তকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের মুখে মুখোশ ছিল এবং সেগুলো দেখে পর্যালোচনা করছে পুলিশ।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এ হামলায় অংশ নেয় দুজন। এদের মধ্যে একজন ছিল মুখোশ পরা এবং অন্যজন পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরা। যাতে তাদের চেনা না যায়। রাতে তারা এক এক করে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ঘটনা ঘটিয়ে একসঙ্গেই বের হয়ে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এমন কথা নিশ্চিত করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা ও পুলিশের রংপুর জোনের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য।

এর আগেও একই কথা জানান ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা। সিসিটিভি ফুটেজ ধরেই এগোচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে হামলায় অংশ নেয় হালকা স্বাস্থ্যের দুজন তরুণ। তবে তাদের চেহারা পুরো বোঝা যাচ্ছে না। হাতুড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করেছে।

সাধারণত অন্যান্য উপজেলায় ইউএনওরর কার্যালয় প্রাঙ্গণ ও থানা প্রায় কাছাকাছি অবস্থান হলেও ঘোড়াঘাট উপজেলার চিত্র ভিন্ন।

ঘোড়াঘাট উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ওসমানপুরে আর ঘোড়াঘাট থানা সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

ওসমানপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ইউএনওর বাড়ির পেছনের জায়গা অনেকটা নিরব। নেই তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়িতে ছিল শুধু একজন নৈশপ্রহরী।

এ অবস্থায় থানা পাঁচ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় নিরাপদ ভেবেই দুষ্কৃতকারীরা নির্বিঘ্নে এই ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রাঙ্গণের নিকটবর্তী অধিবাসী ঘোড়াঘাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভুট্টু জানান, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও থানার দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।

এ কারণেই উপজেলা পরিষদ ওসমানপুরে প্রায়ই চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘটায় দুষ্কৃতকারীরা। উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের অদূরে গত ১৫ দিন আগে তাঁর বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটে এবং প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর নানান অভিযানে অংশ নেন ওয়াহিদা খানম। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ কারখানা বন্ধসহ বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধে ভূমিকা নেন তিনি।

তবে কী কারণে এই হামলা, সিসিটিভি ফুটেজের দুজন এবং আর কে কে এর পেছনে থাকতে পারে, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ঘটনায় প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ দল। আজ শুক্রবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুরে। এর আগে এ ঘটনায় অপর একজনসহ সন্দেহভাজন হিসেবে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসভবনের নৈশ প্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ ও মাসুদ নামের আরো দুজন আটক করে পুলিশ।

গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। তারা বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও আঘাতে জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁর বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...