কালাই-বগুড়া মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ

আবুবকর সিদ্দিক,জয়পুরহাট: কালাই-বগুড়া মহাসড়কের এক পাশে ঘেঁষে আছে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাকে হাত ধরে বা কাপড়ে নাক ঢেকে চলছে পথচারীরা। সেই স্থানটি জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার শিমুলতলি এলাকায় প্রতিদিনের চিত্র এটি। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে কালাই পৌরসভার কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের উৎকট দুর্গন্ধ সহ্য করেই ওই এলাকা পার হতে হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতে ও বাতাসে দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা স্তূপ ছড়িয়ে পড়ে সড়কে। এতে করে সেখানে যেমন মশা-মাছি উপদ্রব বাড়ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক ঘেঁষে দিনের পর দিন বর্জ্য ফেলা হলেও সংশ্লিষ্টরা তা সরাতে কোন পদক্ষেপই নেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে কালাই পৌরসভা গঠিত হয়। ১২.৯৩ বর্গ কিলোমিটারের এ পৌরসভা ২০১৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌর এলাকায় প্রায় ৪ হাজার ৩শ ঘর-বাড়িতে ২৩হাজার ৬শ ৫৩ জন মানুষের বসবাস। পৌরসভায় ১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পৌরসভার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। এর ফলে প্রতিদিন ২টি ট্রাক ভরে প্রায় ২মেট্রিক টন ময়লা এনে কালাই পৌরসভার শিমুলতলি এলাকায় মহাসড়কের এক পাশে ফেলছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

অভিযোগ ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাই পৌরসভার শিমুলতলি এলাকায় কালাই-বগুড়া মহাসড়কের এক পাশে ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ। দিন যত যাচ্ছে সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ততই বড় হচ্ছে। ঐসব ময়লা-আবর্জনার অধিকাংশই পচনশীল পদার্থ। কালাই পৌরসভার কাঁচা বাজারের নষ্ট হওয়া শাকসবজি, হোটেলের বাসি-পচা খাবার, মুরগি-ব্যবসায়ীদের মরা-পচা মুরগী ও জবাই করা মুরগির পালক, নাড়িভুড়ি এবং বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সেখানে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে এগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই পচে গিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। উৎকট গন্ধের কারণে ঐ এলাকায় পথচারীদের চলাচলের সময় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। অবৈধ ভাবে মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা ময়লার ভাগাড় কারণে পথচারীরা নাকে রুমাল, কাপড় দিয়ে বা হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে ঐ এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। এরপরও সেখানে প্রতিদিন ময়লা ফেলা অব্যাহত থাকায় সকল শ্রেনীর পথচারীদের মানে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও ময়লার ভাগাড়ে পলিথিন আর ব্যবহার করা ওয়ান টাইম কাপের সয়লাব। পচনশীল পদার্থ পচে নষ্ট হয়ে গেলেও পলিথিন আর ওয়ান টাইম কাপগুলো থেকে যাচ্ছে অক্ষত। ঐসব পলিথিন আর ওয়ান টাইম কাপগুলো বৃষ্টির পানিতে ভেসে আশপাশের ফসলি জমিতে পড়ে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে। সেই সঙ্গে শিমুলতলির খালে গিয়ে খালের পানি দূষিত হচ্ছে।

কালাই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজ্জাক বলেন, মরহুম খন্দকার হালিমুল আলম জন কালাই পৌরসভার মেয়র থাকালীন সময়ে তিনি শিমুলতলি এলাকায় পতিত জায়গায় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কথা আমাদেরকে বলছিলেন। তাই সেই থেকে এখনও সেখানে ময়লা-আবর্জনার ফেলা হচ্ছে।

কালাই পৌরসভার শিমুলতলি এলাকার বাসিন্দা ইস্পাহান আলী অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা মোটেও ঠিক হচ্ছেনা। ময়লা-আবর্জনা থেকে এলাকায় জীবাণু ছড়াচ্ছে। সেখানে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি ও পোকামাকড়।

আক্ষেপ করে পুনট গ্রামের আব্দুল হামিদ নামে এক পথচারী বলেন, এখানে ময়লা ফেলায় পরিবেশ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। কারও পক্ষে নিঃশ্বাস নিয়ে এ সড়ক পার হওয়া সম্ভব নয়। আমি নাক বন্ধ করেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করি।
কালাই-বগুড়া মহাসড়কের বসুন্ধরা পরিবহনের বাসচালক উজ্জল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কের ঐ স্থানে আসলেই আর সামনে যেতে মন চায় না। উৎকট দুর্গন্ধ ফলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সঙ্গে বমিও চলে আসে। এরকম অবস্থা অনেক দিন থেকে চলছে। আমাদের চলাচলের অনেক কষ্ট হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

অভিযোগ করে কালাই ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ধজেন্দ্র নাথ দাস বলেন, প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ময়লার ভাগাড়টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমি পৌর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
কালাই পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোছাঃ লিলি বেগম বলেন, কালাই পৌরসভাটা অনেক ছোট। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা কম আছে। পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। নতুন জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত পথচারীদের একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। পৌরসভার যেন মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা না ফেলা তার জন্য দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...