শফিউল আলম প্রধান কমল: ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর কেউ কি ভেবেছিলো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে? কেউ কি ভেবেছিলো দেশরত্ন শেখ হাসিনা সামরিক শাসকের কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে? কেউ কি ভেবেছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ হবে? কেউ কি ভেবেছিলো, বঙ্গবন্ধু কন্যার দ্বারাই বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হবে? কেউ কি ভেবেছিলো বিশ্বের যে মোড়লরা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই আজকে তারই কন্যার কাছ থেকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের রহস্য জানতে চাইবেন? তারা সেটা কোনোদিন ভাবেননি কিন্তু বাস্তবে এটাই ঘটেছে এবং ঐ ষড়যন্ত্রকারীরাই আজকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রশংসা করছেন ও রহস্য জানতে চাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে। তাদের বোঝা উচিত রহস্য আর কিছুই না, শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর ফ্রেশ রক্ত দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র নেতৃত্ব। ফ্রেশ রক্ত কোনদিন বেইমানি করেন না, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
আর এজন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। অন্যদিকে বিএনপি পারেননি কারণ তাদের রক্ত দূষিত, সে জন্যই তাদের রক্ত জনগণের সাথে বেইমানি করেছে এবং দেশকে বহু বছর পিছিয়ে দিয়েছে। তাদের রক্ত দূষিত না হইলে অবশ্যই তারেক জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশেই থাকতো। বিএনপি’র রক্ত দূষিত না হলে আজকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলেই জীবিত থাকতো, একুশে আগস্ট এর গ্রেনেড হামলা হইতো না।
৭ম কংগ্রেসের আগে বাংলার যুব সমাজ কি চিন্তা করেছিলেন যে, দেশরত্ন শেখ হাসিনা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির সুযোগ্য সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ কে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করবেন বা শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের দায়িত্ব নেবেন? আবার দায়িত্ব যখন পেলেন তখন অনেকের মনে সংশয় ছিল যে, চেয়ারম্যান শেখ পরশ কি পারবেন যুবলীগকে প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শে ফিরিয়ে নিতে, পারবেন কি যুবলীগের সুনাম ফিরিয়ে এনে একটি আদর্শ সংগঠনে পরিণত করতে? প্রশ্ন এজন্য এসেছিল যে, তিনি সক্রিয় রাজনীতির বাইরে ছিলেন, দেশের বাহিরে পড়াশোনা করেছেন, শিক্ষকতা করতেন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি যারা কমিটেড, তাদের মতে তিনি ‘অবশ্যই পারবেন’ কারণ ঐ একটাই আর তা হলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত এবং তা ফ্রেশ রক্ত, শেখ পরশ হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুরই আপন বোনের নাতি অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর রক্ত আবার অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর আপন ভাগিনা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জ্যৈষ্ঠ সন্তান। সুতরাং শেখ পরশ এর রক্তের প্রতিটি কণিকায় যে রাজনীতি বহমান তা বলার অবকাশ নাই। বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে শেখ পরশের বাবা, শেখ ফজলুল হক মনি যেমন পেরেছিলেন যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শেখ মনিরই সুযোগ্য সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশও পারবেন, যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে। শুধুই সময়ের অপেক্ষা কারণ ঐ একটাই, আর তা হল বঙ্গবন্ধুর রক্ত। বঙ্গবন্ধুর রক্ত, স্বপ্ন যেমন দেখাইতে পারেন, ঠিক তেমনি স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় তাও জানেন।
শুধুই সময়ের অপেক্ষায এজন্য বলছি যে, শেখ পরশ তার যাত্রায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাশে পাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও বিশ্বস্ত সিপাহসালার আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যিনি তৃণমূল থেকে রাজনীতি শুরু করে সকল আন্দোলন সংগ্রামে সফলতার সহিত নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন, অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ও সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত, অত্যন্ত বিনয়ী, পরিশ্রমী ও দৃঢ়চেতা মনোবলের অধিকারী। যুবলীগের নেতাকর্মীরা বর্তমান নেতৃত্বকে বঙ্গবন্ধু কন্যার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে অভিহিত করেছেন।
ইতিমধ্যে শেখ পরশ একাত্তর টেলিভিশন কে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেন, “রাজনৈতিকভাবে যাদের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু তারা হয়তোবা সিস্টেমের অভাবে হয়তোবা সাংগঠনিক পরিচ্ছন্নতার অভাবে পিছিয়ে আছে, তাদেরকে আইডেন্টিফাই করতে হবে”। এ বক্তব্যটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং যুবলীগের রাজনীতিতে যারা সম্পৃক্ত হতে চান, তারা আশাবাদী হয়েছেন।
পরশ নিখিল নেতৃত্ব মূলত ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা করেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুন্দর সিস্টেম দিয়ে, যে সিস্টেমের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য উৎকোচ দূরে থাক, তদবির করারও সুযোগ নাই। জীবন বৃত্তান্ত অত্যন্ত সুক্ষভাবে পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন মারফতে তথ্য যাচাই-বাছাই করে যারা মেধাবী, যাদের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আছে, তারা দলের প্রতি কমিটেড, যাদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র কোন অভিযোগ নাই, তাদেরকেই শুধু দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন সম্পর্কে টেলিভিশন চ্যানেল ইটিভিতে সাক্ষাৎকারে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নিখিল বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার, আসন্ন যুবলীগের নতুন গঠিত কমিটিতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক সেবনকারী, মাদক বিক্রেতা, অত্যাচারী ও জুলুমকারী, অনুপ্রবেশকারী কোন স্তরেই স্থান পাবে না”
যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, যুবলীগের কেউ অপকর্মে জড়িত থাকলে আপনারা তাদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিন, যারা অপকর্ম করবে তারা যুবলীগের কেউ না। যুবলীগ কোন অপরাধীকে লালন-পালন বা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন না। যুবলীগ শীর্ষ নেতৃত্বের এমন দ্ব্যর্থহীন কথা যুবলীগের ইতিবাচক বা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিরই ইঙ্গিত দেয়। পরশ-নিখিল দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত যারা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন তাদের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন, কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি।
অন্যদিকে, করোনাকালীন সময়ে বিশ্ব মানবতার নেত্রী, মমতাময়ী জননী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সারা বাংলাদেশে প্রায় ৪২ লক্ষ্য গরিব, দুঃখী, অসহায়, কর্মহীন, পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তা প্রদান, করোনা রোগী ও মৃত্যু ব্যক্তির লাশ বহনের জন্য ২০ টি ফ্রী এম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা, করোনা রোগীদের অনলাইনে স্বাস্থ্য টিপস এর জন্য টেলিমেডিসিন সার্ভিস সেবা ও সারা বাংলাদেশে বন্যার্ত মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তা প্রদান, করোনায় মারা যাওয়া মৃত্যু ব্যক্তির লাশ দাফন, কৃষকের ২০৫০ হেক্টর জমির ধান কেটে দিয়ে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সমগ্র দেশবাসীর কাছে “মানবিক যুবলীগ” এ পরিণত হয়েছেন। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় যুবলীগ কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক মাঠে ১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পথশিশু ও ভবঘুরে মানুষের মাঝে প্রায় ২০ হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করেন এবং সারা বাংলাদেশর প্রতিটি ইউনিট এ কর্মসূচি পালন করেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে যুবলীগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, শুধুমাত্র আষাঢ় মাস থেকে পরবর্তী তিন মাস যুবলীগ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩২ লাখ বৃক্ষরোপণ করেছেন, যে কার্যক্রম এখনো চলমান। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফলভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুবলীগকে প্রকৃতিবান্ধব যুবলীগ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
পরশ-নিখিল নেতৃত্ব একদিকে যেমন সাংগঠনিক স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের যে কোন দুর্যোগে মানব সেবায় সর্বদা নিয়োজিত রাখছেন। সুতরাং এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে যুবলীগ ইতিবাচক ধারার রাজনীতির দিকেই অগ্রসর হচ্ছেন এবং খুব শীঘ্রই পরিচ্ছন্ন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে একটি সুশৃংখল ও যুব বান্ধব সংগঠন হিসাবে নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করবে।
প্রাণপ্রিয় সংগঠন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর জন্য শুভ কামনা রইল।
লেখক: শফিউল আলম প্রধান কমল
পিবিএ/এসডি