পিবিএ,ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় “যার জমি আছে ঘর নেই তার জমিতে গৃহ নির্মাণ” উপ-খাতের আওতায় গৃহহীনদের বাসগৃহ নির্মানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজস্ব অফিস সহায়ক মিন্টুর নেতৃত্বে দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছে। গতকাল হাবিবপুর গ্রামে নির্মানাধীন একটি ঘর নির্মানের সময় দুদিন আগে সম্পন্ন হওয়া একটি দেয়াল ধ্বসে রাজন নামের এক নির্মান শ্রমিক আহত হয়।
হঠাৎ পাকা স্থাপনা ভেঙ্গে পড়ায় বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউএনও’র অফিস সহায়ক মিন্টু বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যম কর্মীদের ম্যানেজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরেজমিন ও অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ চলতি অর্থ বছরে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭টি ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির প্রথম থেকেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল আল মাসুম প্রকল্পের সদস্য সচিব হিসাবে জানান, তার অফিসে এ সংক্রান্তে কোন তালিকা নেই, সম্পূর্ণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এককভাবে দেখভাল করছেন এমনকি কোন গ্রামের কোথায় ঘর হচ্ছে সে বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য দেয়নি নির্বাহী কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তথ্য প্রদানে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
হাবিবপুর গ্রামের নির্মাধীন ঘর ধ্বসে পড়ার বিষয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুর রহমান বলেন, নামকাওয়াস্তে দায়সারাভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। গরীবের ঘরে ইউএনও’র থাবা’র মত ব্যক্তিগত প্রভাব খাঁটিয়ে অর্থলোপাট করছে, বিষয়টি বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিলেই সত্যতা মিলবে। হাবিবুর গ্রামের আরব আলী জানান, পাকা ঘরের নিচে সিসি ঢালাইবিহীন নরম মাটি থেকে ইট গাঁথা শুরু করায় ভবিষ্যতে এসব ঘর ফেটে চৌচির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে খুবই নিম্নমানের ইট বালি ও স্বল্প পরিমান সিমেন্ট ব্যবহার করায় ঘরগুলি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ঘরে উপরের ছাউনীতে হালকা কাঁচা মেহগনি কাঠের ফ্রেম ও রেলিং বাঁধুনিতে রডের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে জিআই তার ফলে ঝড়বৃষ্টিতে উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। মনোহরপুর, নাকোল, দিগনগর, কাঁচেরকোলসহ বিভিন্ন এলাকায় হতদরিদ্রদের জন্য নির্মিত এসব ঘর খুবই দিনদিন ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে, কিছু ঘরের পলেস্তরা খসে পড়ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গরীবের এসব ঘর পেতে একটি দালাল সিন্ডিকেট কাজ করেছে। অনেক এলাকায় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে পাকা ঘরের তালিকায় নাম লেখাতে হয়েছে। তবে মধ্যস্বত্ত্বভোগী এই সিন্ডিকের বিরুদ্ধে ঘর হারানোর ভয়ে ক্যামেরার সামনে কেউ কথা বলতে চায়না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রকল্পে কর্মরত একাধিক নির্মাণ শ্রমিক জানান, মাত্র বিশ বস্তা সিমেন্ট দিয়ে প্রতিটি ঘর সম্পন্ন করার আদেশ রয়েছে। এছাড়া পাকা ঘরের নিচে সিসি ঢালাই না দিলে এসব ঘর অচিরেই ভেঙে পড়ার সম্ভবনা আছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুন্নবী কালু জানান, নির্বাহী কর্মকর্তা বেপরোয়া প্রভাবশালী তাই তিনি একক নেতৃত্বে সরকারী টাকা টাকা লোপাটের ধান্দায় ব্যক্তিগত অফিস সহকারি দিয়ে নিম্নমানের কাজ করাচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা অফিসে কোন সমন্বয় কিংবা কোন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছেন বলে তার জানা নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, ইউএনও এ প্রকল্পের সভাপতি এবং পিআইও সদস্য সচিব হলেও যতটুকু জানা গেছে, অফিস সহকারি মিন্টুর দিয়ে ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রি দিয়ে কাজ চলছে বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গরীব মানুষের মাথা গোজার জন্য গৃহীত উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে। এ প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আরো ভাল বলতে পারবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের অব্যবস্থাপনার কারনে হাবিবপুর গ্রামে এ দূর্ঘটনা ঘটে। পাকা ঘরগুলি সরকারি বিধিমোতাবেক করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিন্মমানের ইট, সিমেন্ট, বালি ব্যবহারের বিষয়টি এড়িয়ে বলেন ঘরগুলি হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত কোথায় ভেঙ্গে পড়লে পুন:রায় মেরামত করে দেয়া হবে। ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ সঠিন নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পিবিএ/আরিফ মোল্ল্যা/এসডি