পিবিএ,দুমকি (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর ৪৬নং উত্তর চরগরবদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে ক্ষুদ্র মেরামত, শ্লীপ, মেন্টেনেন্সসহ বিভিন্ন খাতের সরকারী বরাদ্দের সাড়ে ৩লক্ষাধিক টাকা লোপাট করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসির সভাপতির যোগসাজসে বরাদ্দের পুরো অর্থ ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসএসসি’র সভাপতি মো: ফারুক হোসেন ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানাযায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৪৬নং উত্তর চরগরবদি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতে ১লাখ ৫০হাজার টাকা, শ্লীপে-৫০হাজার টাকা, মেন্টেনেন্সে ৪০হাজার টাকা, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায়-৫হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিকে ১০হাজার টাকা, ক্রীড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খাতে ২হাজার ও ১৫ আগষ্ট-২হাজার টাকাসহ মোট ২লাখ ৫৯হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে শ্লীপে-৫০হাজার টাকা, মেন্টেনেন্সে ৪০হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিকে ১০হাজার টাকা, ক্রীড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খাতে ২হাজার ও ১৫ আগষ্ট-২হাজার টাকা মোট ১লাখ ৪হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। এ দু’ অর্থবছরে সরকারী বরাদ্দের পরিমান ৩লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যালয় ভবনের চারটি জানালা গ্রীল, পাল্লা মেরামত, ৩টি বীম এর সামান্য কিছু অংশ প্লাটার খসে পড়া অংশ মেরামত করা হয়েছে। যাতে সর্বোচ্চ ৩ব্যাগ সিমেন্ট ও ২বস্তা বালু-খোয়া খরচ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের পর ৫টি ফ্যান লাগানো হয়েছে যার ২টিই অভিভাবকদের অনুদান। ৪হাজার ৬শ টাকার খেলাধুলা সামগ্রী ও কিটবক্স ক্রয় করা হয়। ওই অর্থবছরে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান ও ১৫ আগস্টের কোন অনুষ্ঠান হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের কিছু পুরাতন বেঞ্চ সংস্কার করা হয়েছে মাত্র। এভাবে প্রতিটি খাতে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সরকারী বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সরকারী বরাদ্দের টাকা খরচের ব্যাপারে বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের সাথেও কোন রকম আলোচনা করেন নাা। অভিযোগ রয়েছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে লামসাম ধরিয়ে দিয়ে প্রধান নিজেই বাকী টাকা হাতিয়ে নেন। শিক্ষক ২০১৯ সালে তার নিজের বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন, ২০২০ সালে নিজ বাড়ীর সামনে একটি পুকুর ভরাট করেছেন। বিদ্যালয়ের সরকারী বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করে তার নিজ বাড়ীতে কাজ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে কোন কোন খাতে কি পরিমান সরকারী বরাদ্দ এসেছে তা কেবলমাত্র প্রধান শিক্ষকই বলতে পারবেন। আমাদের সাথে এ বিষয়ে কখনও কোন আলোচনা করেন না। বিদ্যালয়ে যতটুকু মেরামত হয়েছে তা সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। কাজ যাই করুক না কেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নিয়ে তিনিই (প্রধান শিক্ষক) বরাদ্দের পুরো টাকার ভাউচার অনুমোদন ও জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। তিনি আরও বলেন, গেল বছর বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়নি, ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানও হয়নি। এদু’টি খাতের বরাদ্দের টাকা কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা বলতে পারব না।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারী বরাদ্দের অর্থ ব্যয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকিতে হয়েছে। কাজ না করে ভাউচার দেয়া হয় নাই। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সভাপতির সাথে আলোচনা ছাড়া কাজ করা হয়নি। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক না।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: ফারুক হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজেই ক্ষুদ্র মেরামতের কাজসহ সকল উন্নয়ন কাজ করে থাকেন। আমার টার্মে কোন বরাদ্দ এসেছে বলে আমার জানা নেই। দু’দিন আগে প্রধান শিক্ষক ৪০হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা বলেছে। আগের কমিটির আমলে ক্ষুদ্র মেরামতের দেড় লাখ টাকা পেয়েছিল বলে শুনেছি। তবে কিছু ঘাপলা থাকতে পারে। স্কুল খোলার পর খোঁজখবর নিয়ে বলতে পারবো। ম্যানেজের প্রশ্ন অবান্তর।
পিবিএ/সোহাগ হোসেন/এসডি