পিবিএ,গুরুদাসপুর(নাটোর): মানবতার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর বাজারের বাসিন্দা আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে ডা.আমিনুল ইসলাম সোহেল ও তার ছোট ভাই চাঁচকৈড় হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর। শুধু চিকিৎসা সেবা দিয়েই থেমে থাকেননি তারা দুই ভাই। বাবার দানকৃত জমিতে গড়ে তুলেছেন এতিম শিশুদের জন্য হাফেজিয়া মাদ্রাসা। যেখানে এতিম শিশুদের পাশাপাশি গ্রামের অসহায় পরিবারের সন্তানরা পাচ্ছে বিনামুল্যে পড়াশোনার সুযোগ। সাধ্যের মধ্যে গরীব অসহায় ছিন্নমুল মানুষদের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করে যাচ্ছেন তারা।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কি.মি পরেই রাস্তার বাম পাশে চোখে পরবে সবুজ প্রকৃতির মাঝে “হযরত আলী (রাঃ) আলসানী এতিম খানা হাফেজিয়া মাদ্রাসা”। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর এলাকায় আলহাজ্ব মোঃ আনোয়ার হোসেনের দানকৃত জমিতে মাদরাসাটি ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন ডা.আমিনুল ইসলাম সোহেল এবং প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আমিরুল ইসলাম সাগর।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমীনে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখাযায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ জন এতিম শিশু ও গ্রামের অসহায় ছিন্নমুল পরিবারের ৩৮ জন শিশু শিক্ষার্থী বিনামুল্যে পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বই-খাতা-কলম, তিন বেলা খাবার এবং এতিম শিশুদের জন্য পোশাকও বিনামুল্যে দেওয়া হয়। ৫০ জন শিক্ষার্থীদের মকতব পড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে ৪ জন মুহতামিম মাওলানা। ওই ৪ জনের খাবার এবং মাসিক বেতনও তারা দুই ভাই দিয়ে থাকেন।
কথা হয় মাদরাসার সুপার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মতিনের সাথে। তিনি জানান, ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছে। তারপর থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়। মাদরাসায় হেফজোখানা ও মকতব মিলে রয়েছে ৪টি শ্রেণী। শিশু শ্রেণী, প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী ও তৃতীয় শ্রেণী। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ডা.আমিনুল ইসলাম সোহেল মাদরাসার যাবতীয় খরচ দিয়ে থাকেন। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বই, খাতা,কলম, পোশাক, খাবার এবং শিক্ষকদের বেতনও তিনিই প্রদান করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে একটি এতিম খানা হাফেজিয়া মাদরাসা। সুবিধা পাচ্ছেন এলাকার এতিম শিশু ও ছিন্নমুল পরিবারের সন্তানরা। তারপরও প্রতিদিন মাদরাসার সার্বিক খোঁজ খবর রাখেন মাদরাসার পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর।
হযরত আলী (রাঃ) আলসানী এতিম খানা হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, তার বাবার দানকৃত জমিতে তার বড় ভাই মাদরাসাটি গড়ে তুলেছেন। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেন অসহায় ছিন্নমুল মানুষের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার। নিজ গ্রাম নাজিরপুর বাজারে তাদের একটি ক্লিনিক এবং চাঁচকৈড় কাঁচারিপাড়ায় অবস্থিত হাজেরা ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমেও অসহায় রুগীদের বিনামুল্যে তারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি গ্রামের অসহায় এতিম ছেলেদের কথা ভেবে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.আমিনুল ইসলাম সোহেল জানান, গ্রামের এতিম ও অসহায় ছিন্নমুল পরিবারের সন্তানদের কথা চিন্তা করেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন তিনি। পেশায় তিনি একজন ডাক্তার। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি গ্রামের অসহায় এতিম শিশুদের এগিয়ে নিয়ে যেতে তার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। ভবিষ্যতে আরো বড় কিছু করার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
পিবিএ/নাজমুল হাসান/এসডি