“এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা”

তাহিরপুরে অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৩’শ একর জমি পানির নিচে

পিবিএ,তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় গত ৪ দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট চতুর্থ দফা বন্যায় রোপা আমন ধনের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে তাহিরপুরে অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৩’শ একর আমনের জমি পানির নিচে তালিয়ে গেছে।
চতুর্থ দফা বন্যায় অমনের পাশাপাশি রবিশস্য বিনষ্ট হওয়া সহ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম দূরভাগে আছে প্রায় র্অধলক্ষাধিক মানুষ। একদিকে করোনাভাইরাস অন্যদিকে টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফা বন্যা ভয়ে যাওয়ায়এ বছর তাহিরপুর উপজেলার রোপা আমন চাষাবাদে বিগ্ন ঘটে । কিন্তু ভয়ে যাওয়া গত বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উপজেলার সাধারণ কৃষকগণ তাদের বুকে নতুন স্বপ্ন লালন করে রোপা আমন চাষাবাদ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিল কৃষকগণ। কিন্তু দফায় দফায় ভয়ে যাওয়া বন্যার রেষ কাটার একমাস যেতে না যেতেই আবারও গত ৪/৫ দিনের ভারী বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারও সৃষ্ট চতুর্থ দফা বন্যায় নিমজ্জিত হল কৃষকের স্বপ্নের আমন ক্ষেত।

খরা ও বৃষ্টি সব মিলিয়ে তাহিরপুরে ক্ষতিগস্ত হয়েছে অধিকাংশ কৃষকের আমন ক্ষেতের পাশাপাশি বিনষ্ট হয়েছে রবিশস্যও।
আর কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফের দেখা দিয়েছে বন্যার । এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রাম নতুন করে বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়েছে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, খরা, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দফায় দফায় ভয়ে যাওয়া বন্যার কারণে একদিকে আমনের চাষাবাদ যেমন বিলম্বিত হয়েছে। যার কারণে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে রোপা আমন কম আবাদ হয়েছে।

এ বছর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজ ও ১হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের খরা, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে বেশিরভাগ কৃষকের রোপা আমান ও রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ৩’শ একর রোপা আমন জমি পানির নীচে তলিয়েছে।
তাহিরপুর সদর, বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, বালিজুরি ও বড়দল উত্তর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দফায় বন্যা এখন আবার ভারী বৃষ্টিপাত, পানি বৃদ্ধি, খরা যেন ভোগান্তি আর দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের। “এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা”।

এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি আজ বৃষ্টি না থাকায় কিছুটা কম থাকলেও গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিপৎসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সীমান্ত নদী জাদুকাটা উপচে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর সেতুর এপ্রোচের ১০০ মিটার রাস্তা ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার ব্রীজের পূর্ব থেকে দূর্গাপুর পর্যন্ত রাস্তা পানিতে তলিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
দক্ষিণকুল গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মিরা বলেন, গত ৩/৪ দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে আনোয়ারপুর সড়কের এপ্রোচের ১০০ মিটার সড়কটি তলিয়ে যায়। সেই সাথে আমাদের বাড়িঘরের উঠানে পানি ওঠায় আমরা চরম ভোগান্তি আর দূরভোগে আছি।
বাদাঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ আফতাব উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নের কুনাট-ছড়া, পাঠানপাড়া, বাদাঘাট, কামড়াবন্ধ, মল্লিকপুর, সোহালা ইসবপুর, নূরপুর, লামাপাড়া, নাগরপুর, সোনাপুর, ননাই, ভূলাখালি গ্রামের প্রায় ৬’শ একর জমির আমন ধানের খেত দ্বিতীয় দফা পাহাড়ি ঢলে বিনষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি কমার পর ওই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকগন আবারও দ্বিতীয় দফায় ক্ষতি হওয়া খেতে রোপা আমনের চারা রোপন করে। কিন্তু এখন আবার কয়েক দিনের অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কারণে এখন আবার চতুর্থ দফা বন্যায় এই ইউনিয়নের প্রায় ৮ থেকে ৯’শত একর জমির আমন ধনখেত গত ৩ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি তাদের ক্ষতিপূরনের বিষয়টি নজরে আনার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। তিনি আরো জানান, তাদের রোপা আমন জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তাদের বসত বাড়িতেও ঢলের পানি উঠেছে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুক মিয়া বলেন, পৈলনপুর, বারহাল, খাসতাল, জালালপুর, বিটপৈলনপুসহ বেশিরভাগ গ্রামের কৃষকের জমির আমন ধন খেত ৩/৪ দিন যাবৎ বন্যার পানির নিচে রয়েছে। বন্যার পানি যদি দু’একদিনের মধ্যে না কমে এবং পানি থাকা অবস্থায় রোদ উঠে এরকম আর কয়েক দিন থাকে তাহলে পানির নিচে থাকা ধরের জমি গুলো সব নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ৮’শ একর রোপা আমন জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা বলেন, সম্প্রতি পাড়ি ঢলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩’শ একর জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।

পিবিএ/কামাল হোসেন/এসডি

আরও পড়ুন...