আমিনুল ইসলাম জুয়েল,পিবিএ,পাবনা: পাবনার ভাঙ্গুড়ার একটি ক্লিনিকে অন্যের নাম সনদ ও বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া সেই ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ করিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে পুলিশ তাকে নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার ওই ভূয়া চিকিৎসকের নাম মাসুদ রানা। তিনি সৈয়দপুরের হাতিখানা গ্রামের শেখ মো. আবদুল হান্নানের ছেলে।
মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান, পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার মাসুদ রানা দীর্ঘ সাত বছর ধরে পাবনার ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার নামের একটি ক্লিনিকে মাসিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেতনে কর্মরত থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন।
তিনি ঢাকার খিলগাঁয়ের বাসিন্দা ডা. মাসুদ করিমের নাম, বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ও সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে ভুয়া চিকিৎসককে নীলফামারী জেলা পুলিশের সহায়তায় সৈয়দপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত কি না, কীভাবে সে ভুয়া কাগজ তৈরি করেছে তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি ।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানার আগেও একই ধরনের অপরাধে ২০০৫ সালে কুষ্টিয়ায় গ্রেফতার হন। সেখানে তার নামে একটি মামলাও রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রকৃত চিকিৎসক মাসুদ করিম বলেন, তিনি ১৯৯০-৯১ সেশনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এমবিবিএস শেষ করে নিবন্ধন পান বিএমডিসির, যার নিবন্ধন নং-৩৩৩৬০।
বর্তমানে ঢাকার খিলগাঁওয়ে নিজস্ব ডক্টরস চেম্বারে প্রাইভেট চিকিৎসা দেন। স্থায়ী ঠিকানা ফেনীর সোনাগাজী। বাবার নাম আবদুস শাকুর। বন্ধু চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানতে পেরে পাবনায় যান তিনি। তার নাম-পরিচয় ও নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে একজন চিকিৎসক সেজে কাজ করছেন। বিষয়টি তার নিকট খুবই অপমানজক বলেও জানান তিনি।
পরে তিনি বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় এবং পাবনা সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দেন।
ঘটনা জানাজানি হওয়ায় গা-ঢাকা দেন কথিত ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ করিম। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএর পাবনা শাখার আজীবন সদস্যও ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাও হয়।
পরে প্রকৃত ডা. মাসুদ করিম জেলা সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভূয়া ডা. মাসুদ জানান, তাকে ডাক্তারের জাল সনদ সংগ্রহ করে দেন আরেক ভূয়া ডাক্তার সাহেব আলী ওরফে শান্ত। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গী বাজারের অদুরে রহিমাবাদ গ্রামের চাঁদ আলী সরকারের ২য় ছেলে। তিনি আমিনুল ইসলাম নমের একজন ডাক্তারের নাম পরিচয় ব্যবহার করতেন। তারই শিষ্য এই মাসুদ রানা তাকে ২০১১ সালে সাংবাদিকদের কাছে আসল ঘটনা ফাস করে দিয়েছিলেন। পরে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে তা প্রকাশিত হলে সাহেব আলী গ্রেফতার হয়েছিলেন। প্রতারক মাসুদ কেন তার ওস্তাদকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তা জানাননি।
ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের মালিক আবদুল জব্বার জানান, ভূয়া ডা. মাসুদ এর কাগজপত্র দেখে কখনো মনে হয়নি তিনি ভুয়া চিকিৎসক। আর তিনি আমার এখানে চাকরি করার আগে পাবনা শহরেও দীর্ঘদিন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।
প্রসঙ্গত, মাসুদ রানা প্রকৃত ডা. মাসুদ করিমের বিএমডিসি সনদ জাল করে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে আলট্রাসনোলজিস্ট ও আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি কর্মস্থল থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।
পিবিএ/এফএস