মানুষের চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করা তার দায়িত্ব। কৃতজ্ঞতার প্রথম ও বড় দিক হচ্ছে অনুগ্রহ যে এটি আল্লাহর দান—এই বিশ্বাস রাখা। পবিত্র কোরআনে বারবার আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে যে নিয়ামত আছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৩)
শক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে
আল্লাহ মানুষের ভেতর যে শক্তি, সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রেখেছেন তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এই শক্তি ও যোগ্যতা ব্যবহার না করা কিংবা অন্যায় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অকৃতজ্ঞতার প্রতিরূপ। সুতরাং একজন মুমিনের বিশ্বাস হবে—ক. নিজের চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি আল্লাহপ্রদত্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ।
খ. এই গুণ ও যোগ্যতার বিষয়ে অবহেলা করবে না এবং তা অকার্যকর করবে না।
গ. অন্যায় ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করবে না।
ঘ. সত্য-ন্যায়ের ক্ষেত্রে ও ইসলামী শরিয়তসম্মত উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে তা ব্যবহার করবে।
একটি হাদিস, বহু শিক্ষা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। (তবে) প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তোমাকে যা উপকার দেবে সে বিষয়ে প্রলুব্ধ হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম অকর্মণ্য হয়ো না। কোনো (অবাঞ্ছিত) বিষয়ে আক্রান্ত হলে বোলো না, যদি আমি এটা করতাম তাহলে এটা এটা হতো; বরং বলবে আল্লাহর ফয়সালা; তিনি যা চান তা-ই করেন। কারণ ‘যদি’ কথাটা শয়তানের কাজের পথ খুলে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)। এই হাদিসে চিন্তা ও কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর গভীর শিক্ষা আছে। ভারসাম্যপূর্ণভাবে গোটা বিষয়টি উম্মতের চিন্তা-চেতনায় উপস্থিত করা হয়েছে।
শক্তিশালী মুমিনের ব্যাখ্যা
দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ আছে। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এখানে শক্তি অর্থ পরকালীন বিষয়াদিতে উদ্যোমী ও কর্মতৎপর স্বভাব। অর্থাৎ তারা আল্লাহর পথে সংগ্রামে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ইত্যাদি কাজে অগ্রগামী হবে। নামাজ, রোজা, জিকিরসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে তারা বেশি আগ্রহী থাকে। (শরহে মুসলিম)
ইমাম নববী (রহ.) মূলত মানসিক ও স্বভাবের শক্তির কথা বলেছেন। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মুমিন জীবনের সব কাজই আখিরাতের কাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুসারে হয়।
আল্লামা মুনাভি (রহ.) লেখেন, ‘যাকে আল্লাহ কারিগর বানিয়েছেন এবং বিভিন্ন বস্তুসামগ্রীর নির্মাণে নিয়োজিত করেছেন তার কর্তব্য, আল্লাহপ্রদত্ত বিদ্যা ও কুশলতা আল্লাহর সৃষ্টির সেবার উদ্দেশ্যে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা। এই উদ্দেশ্যে নয় যে কাজ না করলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে কিংবা পারিশ্রমিক অনুপাতে কাজ করবে; বরং কাজটি যে পর্যায়ের যত্ন দাবি করে সে অনুযায়ী কাজ করবে।’ (ফয়জুল কাদির : ২/২৮৬)