পিবিএ ডেস্ক: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ইবাদতের হিসাব নেওয়া হবে, তা হচ্ছে নামাজ। নামাজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। অন্য ইবাদতের চেয়ে নামাজের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে পাওয়া যায় না। নামাজ এমন ইবাদত, এর জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে দাঁড়াতে হয়, দুনিয়াবি সব কাজকর্ম ত্যাগ করতে হয়। কথা বলা নিষিদ্ধ। পূর্ণ মনোযোগ নামাজের মধ্যে নিবিষ্ট রাখতে হয়। অন্যদিকে রোজা, হজ, জাকাত এগুলোর জন্য অজুর প্রয়োজন নেই; কিন্তু নামাজের জন্য অজুর প্রয়োজন আছে। অন্য সব বিধান মহান আল্লাহ তাআলা ফেরেশতার মাধ্যমে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। একমাত্র নামাজ এমন ইবাদত, যা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে তাঁর কাছে ডেকে দান করেছেন।
আজ আমরা সবচেয়ে উদাসীন এই নামাজ নিয়ে। যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, তারাও নামাজ আদায় করে অসচেতন অবস্থায়। রাসুল (সা.) মৃত্যুর আগে যে কয়টি জিনিসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি হলো নামাজ। সত্যিই বর্তমানে নামাজ নিয়ে কত আলোচনা, লেখালেখি আর কত কী? কিন্তু নামাজের আসল প্রাণ আমাদের মাঝে ফিরে আসছে না। আমাদের নামাজ কি এমন সুন্দর হচ্ছে যে একজন অমুসলিম আমাদের নামাজ দেখে ইসলামের দিকে ধাবিত হবে? আমাদের নামাজ দেখে তাদের চোখ জুড়াবে? এমন নামাজ কি আমরা আদায় করছি, যে নামাজের ব্যাপারে রাসুল বলেছেন, ‘নামাজ আমার চোখের শীতলতা।’
নামাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘খুশু-খুজু’। এমন কিছু বিধান আছে, যেগুলো অনুসরণ করলে নামাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয় না।
আপনার দামি কোনো জিনিস যদি হারানোর ভয় থাকে তাহলে আগে সেটি হেফাজত করুন। তারপর নামাজে যান। যাতে নামাজে দাঁড়ানোর পর আপনার মন ছোটাছুটি না করে। আপনার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে, খাবারও প্রস্তুত, এদিকে জামাতের সময় হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আপনি আহার করুন। তারপর নামাজ আদায় করুন। যাতে নামাজের মাঝে আপনার মন খাবারের প্রতি না থাকে। ক্ষুধা নিয়ে নামাজ আদায় করলে সে নামাজ আর নামাজ থাকবে না। সর্বোপরি নামাজের জন্য এমন অনেক বিধান আছে, যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য নামাজকে খুশু-খুজুবিশিষ্ট করা।
আপনি কখনো ভেবেছেন যখন আপনি নামাজে দাঁড়ান, কোন প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াচ্ছেন? যিনি সাত আসমান সাত জমিনের মালিক। যার হাতে সব ক্ষমতা। বিশাল সমুদ্রে কত ফোঁটা পানি আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। তার কাছে কোনো কিছুই গোপন নয়। এভাবে প্রতিটি বিধান পালনে আল্লাহর কথা চিন্তা করেছেন?
শয়তান আমাদের সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দিয়ে থাকে নামাজে। কারণ শয়তান ভালো করে জানে যে নামাজ হচ্ছে বান্দার সবচেয়ে নৈকট্য হওয়ার মাধ্যম। বান্দার সঙ্গে আল্লাহর নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধ।
যেসব উপায়ে নামাজে একাগ্রতা আসে
এ ব্যাপারে ইমাম গাজালি (রহ.) তাঁর কালজয়ী রচনা ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন’ এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এতে তিনি কিছু বিষয়ের কথা আলোচনা করেন, যেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিলে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায়।
আল্লাহ তোমাকে দেখছেন : রাসুল (সা.) বলেন, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০; মুসলিম, হাদিস : ৮)
অর্থ বুঝে কোরআন তিলাওয়াত : এটি অন্তরের একাগ্রত আরো দৃঢ় করে। অন্তত সুরা ফাতেহা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো। (সুরা মুজ্জাম্মিল : ৪)
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) প্রতিটি সুরা তারতিলসহ তিলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩)
এটি আমার জীবনের শেষ নামাজ : প্রতিটি নামাজই হতে পারে জীবনের শেষ নামাজ। রাসুল (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭১)
নিজের পাপ স্মরণ করুন : আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের ভেতর অনুশোচনা নিয়ে আসুন। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন। রাসুল (সা.) দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন।’ (তাফসিরে তাবারি : ৯/১৯৭)
সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা, প্রতিটি নামাজের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা, এগুলোও নামাজের একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পিবিএ/এমএসএম