ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর নিয়ামত। তিনি এগুলোকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য দুনিয়ার শোভারূপে সৃষ্টি করেছেন। যারা এগুলো পেয়ে তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে। এগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সৎ কাজে আত্মনিয়োগ করবে, এগুলো তাদের জন্য স্থায়ী নিয়ামত হিসেবে গণ্য হবে। এর সুফল তাঁরা জান্নাতেও পাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা; আর স্থায়ী সৎকাজ।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নারী, সন্তান, সোনা-রুপার স্তূপ, বাছাই করা ঘোড়া, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪)
এই আয়াতের সারমর্ম হলো, আল্লাহ তাআলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে যে কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখিরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জনে সচেষ্ট হয় ও আখিরাতের কল্যাণ আহরণের লক্ষ্যে তার সুচারু ব্যবহার করে। আল্লাহ তাআলা যেসব বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছেন, ইসলাম মোতাবেক সেগুলো পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সঞ্চয় করলে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জন হবে।
এ কারণেই হয়তো প্রিয়নবী (সা.) খাঁটি ঈমানদারদের হাতে সম্পদ আসা পছন্দ করতেন। কারণ তারা সম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যাবে না; বরং তারা তাদের সম্পদকে মহান আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে। এর মাধ্যমে মাখলুকের সেবা করবে। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) লোক মারফত আমাকে নির্দেশ দেন যে আমি যেন পোশাকে ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হই। অতএব আমি তাই করলাম। আমি যখন তাঁর নিকট এসে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি অজু করছিলেন। তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে গভীরভাবে দেখলেন, তারপর দৃষ্টি অবনত করে বলেন, হে আমর, আমি তোমাকে একটি বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করে পাঠাতে চাচ্ছি, যাতে আল্লাহ তোমাকে গনিমতের সম্পদের অধিকারী করেন। আমি তোমার জন্য উৎকৃষ্ট সম্পদ কামনা করি। আমি বললাম, আমি সম্পদের লোভে ইসলাম গ্রহণ করিনি। আমি ইসলামের আকর্ষণে মুসলমান হয়েছি, যাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকতে পারি। তিনি বলেন, হে আমর, উত্তম লোকের জন্যই উত্তম সম্পদ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৭৬৩)
তা ছাড়া মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কিছু কিছু ইবাদত এমন দিয়েছেন, যেগুলো আর্থিক। যেমন—হজ, জাকাত, এই দুটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম দুটি, এর দুটিই হলো আর্থিক ইবাদত। যার কাছে অর্থ সম্পদ নেই, সে এই ইবাদতগুলো করতে পারবে না। কিন্তু যে আল্লাহভীরু লোক এবং তার কাছে এই ইবাদত করার মতো সম্পদ আছে, সে অবশ্যই এই ইবাদতগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করবে। আবার সে যেহেতু মুত্তাকি, তাই সে তার সম্পদ কখনো বিপথে ব্যয় করবে না। অন্যায়ভাবে হারাম পদ্ধতিতে কোনো সম্পদ অর্জনও করবে না। সুতরাং তার সম্পদ তার জান্নাতে যাওয়ার পথকে সুগম করবে। এ জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) আল্লাহভীরুদের সম্পদশালী হওয়াকে দোষণীয় মনে করতেন না। আব্দুল্লাহ বিন খুবায়ব তার চাচা সূত্রে বলেন, আমরা এক মজলিসে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় নবী (সা.) তাঁর মাথায় পানির চিহ্নসহ উপস্থিত হলেন। আমাদের কেউ তাকে বলল, আপনাকে আমরা আজ খুব প্রফুল্ল দেখছি। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ। অতঃপর মজলিসের লোকজন ধন-সম্পদের আলোচনায় লিপ্ত হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাকওয়ার অধিকারী (খোদাভীরু) লোকদের ধন-সম্পদের মালিক হওয়াতে কোনো দোষ নেই। আর আল্লাহভীরু লোকদের জন্য ধন-সম্পদ থেকে সুস্থতা অধিক উত্তম। মনের প্রফুল্লতাও নিয়ামতরাজির অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৪১)
এ কারণে আমাদের উচিত, মহান আল্লাহর কাছে সচ্ছলতার দোয়া করার পাশাপাশি তাকওয়া অর্জন করা। কারণ তাকওয়া না থাকলে ধন-সম্পদ দুনিয়া-আখিরাত ধ্বংসের কারণ হতে পারে, আর তাকওয়া থাকলে এই সম্পদই জান্নাতের সোপান হতে পারে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। হালাল উপায়ে সম্পদশালী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।