কষ্টের সাথে বসবাস

মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা: সুখবর অনেকদিন শুনি না, কেউ ফোন করলে আতংকে থাকি।এই বুঝি কোনো দুঃ সংবাদ শুনতে হয়।সোশ্যাল মিডিয়াও এখন যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে গুজব আর গজব ছাড়া সেখানেও ভালো কোনো খবর নেই।

এইতো কয়দিন আগে জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে মারতে মারতে, তিনি শেষ পর্যন্ত মরেই গেলেন। আজও মিয়া ভাই খ্যাত প্রখ্যাত অভিনেতা ফারুক ভাইকে কেউ কেউ মেরেই ফেলেছিল,তার ছেলে সিঙ্গাপুর থেকে করুন আর্তনাদ করে বললো দয়া করে আর গুজব ছড়াবেন না। অন্তত মৃত্যুর খবর না জেনে যারা পোস্ট করে, তাদের তালিকায় অনেক সময় বড় বড় জ্ঞানী গুনী ফেসবুক আইডি বিভ্রান্তি মূলক খবর ও পাওয়া যায়।যা গোটা জাতিকে লজ্জায় ফেলে দেয়।মাঝে মাঝে মধ্যে বড় বড় রাজনৈতিক দল কোনো জীবিত ব্যক্তির শোকবিবৃতি দিয়ে নিজের দলকে তামাশায় পরিনত করে ফেলেন।সেই সব দল গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, এই কথা ভাবতেও অবাক লাগে। কদিন আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক জনাব মারুফ কামাল খানকে অব্যাহতি প্রদান করলেন বিএনপির দপ্তরে দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগাঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স।জনাব মারুফ কামাল খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তিনি নাকি নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নন,কখনো বেতন ভাতা ও নেননি।

আস্থা ও বিশ্বাসে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছিলেন।যার নিয়োগ পত্রই নেই তার অব্যাহতির সূত্র কোত্থেকে আসে। এর মধ্যে হেফাজতকে নিয়ে নানারকম নাট্যমঞ্চ রয়েছে।বিভিন্ন জেলা খবর হেফাজতের পক্ষ অবলম্বন করায় কারো কারো বহিষ্কারের সংবাদ।তবে রোজাকে সামনে রেখে বাজার সিন্ডিকেটের সদস্যরা কেউ বসে নেই,দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ও সরকারের সাতদিনের লকডাউন এ যেন গরিবের মারার উপর খাড়ার ঘা।সরকার প্রায় প্রায়ই গরিবদের প্রনোদনা দেয়ার জন্য অর্থ ঘোষণা করেন, তখন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণের কথা মনে পড়ে ” সাতকোটি জনগন সাড়ে সাত কোটি কম্বল, আমার কম্বল কোথায়? “এমনিতেই মনটা খুব খারাপ, খুব কাছের কিছু মানুষ হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে গেল, তালিকাটা প্রতিদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।রাজনীতির করার কারনে প্রায় প্রায়ই ভালো খবরে অভিনন্দন জানাতাম, কিন্তু ইদানীং শোক সংবাদ ছাড়া আমার কাছে কোনো খবরই নেই।কাছাকাছি প্রিয় মানুষগলি সবাই খুবই হতাশ।এখন কেউ কাউকে সাহস দিতে ও ভয় পায়।সাহস শব্দটি কোথায় জানি হারিয়ে যাচ্ছে। গাঙ্গচিলের সভাপতি সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদায় প্রিয় লেখক ও গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রইস উদ্দিন হয়তো আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন।কিন্তু ২০২০ সালের মহান স্বাধীনতা পদক তাঁকে দিয়ে কেনো কেড়ে নেয়া হলো তা আজ ও বোধগম্য হচ্ছে না।এই তীব্র যন্ত্রনা হয়তো সহ্য করতে না পরে মানুষটি অকালে চলে গেল।সবাইকে চলে যেতেই হবেই কিন্তু কিছু কিছু চলে যাওয়া মেনে নিতেই কষ্ট হয়।

নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে হয়তো আবার কারো মৃত্যু সংবাদ শুনতে হবে নয়তো বা আমার চলে যাওয়ার খবর অন্য কারো শুনতে হবে।অনিশ্চয়তার গন্তব্যের মধ্যে রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের জন্য কি কিছু রেখে যাব না?হঠাৎ মায়ের একটি ফোন পেলাম, মা তাঁর ভরাট অশ্রুমাখা কন্ঠে বলছে তোর বন্ধু বিপুলের মা ভালো নেই, আমারো যেকোনো সময় ডাক আসতে পারে, দোয়া করিস আর নামাজ পড়িস।মার একটা কথায় মক্তবে যাওয়া, স্কুলে যাওয়া,বিপুলের মায়ের কথা আর ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে গেল।বিপুলের মায়ের সাথে প্রথমজীবনে ভারত যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।বিপুলের মামা বাড়ির অনেক স্মৃতির কথা চোখের সামনে ভাসছে,সেবার ও একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম।অনেক বছর পর আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছি।ঘাতক চালক কত মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, তার হিসেব নেই।এভাবেই জীবন একসময় থেমে যাবে।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...