বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের নায়ক ওয়াসিম মারা গেছেন শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
ওয়াসিমের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই ওয়াসিম ভাই বার্ধক্যজনিত নানা রোখে ভুগছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
জায়েদ খান জানান, ওয়াসিম করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না।
দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা এ অভিনেতা ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন। ১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। আর নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা।
নায়ক ওয়াসিমের অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান।
তিনি অলিভিয়া, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, কবরী, শাবানার সঙ্গে বেশি সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘দি রেইন’ সিনেমায় নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। এরপর ‘বাহাদুর’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’ সিনেমায় অলিভিয়ার সঙ্গে অভিনয় করেন। ‘রাজ দুলালী’ ছবিতে শাবানার সঙ্গে অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলে। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রসের বাইদানী’সহ বেশকিছু সিনেমায়।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কবরী। গত ৫ এপ্রিল করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরপরই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ৮ এপ্রিল তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিরবিদায় নেন এ কিংবদন্তি অভিনেত্রী।
নায়িকা কবরীর মৃত্যুর শোক না কাটতেই ওয়াসিমের চলে যাওয়া বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনকে।