লক ডাউন যেনো কারো পেটে না পড়ে

তৌহিদ বাদল: বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং হতাশাজনক শব্দ লক ডাউন। কোভিড পরিস্থিতির গতি কিছুটা ক্ষীন করতে লক ডাউনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু লক ডাউন দেওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত উন্নয়নশীল এ দেশের অগ্রগতিতে যেনো লক ডাউন না পড়ে। লক ডাউন যেনো না পড়ে কারো পেটে। তাই লক ডাউন দেওয়ার আগে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে আমাদের দেশের শ্রমজীবি মানুষের কথা। বিশেষ করে পরিবহন, বিপনী বিতানসহ ক্ষুদ্র কল-কারখানায় যারা কাজ করে তাদের উপার্জনের কথা। গত বছর সারা বিশ্বে যে পরিমান মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, তার বোঝ বইতে হবে দীর্ঘ সময়। বেকারত্বের দেশ বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ছে আরো মারাত্মকভাবে। বেকারত্বের লাইনে নতুন করে আরো যুক্ত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ।
দীর্ঘ ১ বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা টিউশনী করে পড়াশুনা করতো এবং একই সাথে পরিবারকে সাপোর্ট দিতো তাদের অবস্থা মর্মান্তিক।

অনেক শিশু শিক্ষার্থীই চিরদিনের জন্য ঝড়ে পড়েছে শিক্ষাঙ্গন থেকে। আর মোটা দাগের কিশোরী মেয়েরা পরিবারের চাপে বিয়েতে বাধ্য হয়েছেন অনিচ্ছায় অথবা চরম বাস্তবতায়। ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বৃহৎ শিল্পখাতে যে ব্যাপক ধ্বস নেমেছিল গত বছর, তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকেই চিরদিনের জন্য প্রিয় প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই যখন পরিস্থিতি, তখন লক ডাউন দেওয়ার আগে অবশ্যই ভাবতে হবে সাধারণের কথা। বিশেষ করে শ্রমজীবি মানুষের কথা। করোনায় মারা যাওয়ার চেয়ে ভাতের অভাবে অনাহারে মারা যাওয়া চরম কষ্টের। এদেশে করোনা মহামারীর চেয়ে দুর্ভিক্ষ মহামারীই বড়। অতীতে এই ভারত উপমহাদেশে দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্বে কোভিডের বয়স এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কোভিডকে বিশ্ব থেকে বিদায় দেওয়া খুব সহজ হবে বলে আশা করা যায় না।

কোভিডের সাথে যুদ্ধ করেই মানুষকে দৈনন্দিন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের উদীয়মান অর্থনীতি নামক বৃক্ষকে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এবং একই সাথে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকে। প্রোডাকশন চালু রেখে, সেলস্ বন্ধ করা কতটা যৌক্তিক- সেই প্রশ্নও সবার সামনে। মানুষের পেটে ক্ষুধা রেখে মানুষকে ঘরে বন্দী রাখা যায় না। তাই লকডাউন দেওয়ার আগে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে সরকারকে। যে কোন উপায়ে মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।কেননা করোনার চেয়ে দুর্ভিক্ষ আরো শক্তিশালী।

আরও পড়ুন...