শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভা

ddc_student_-PBA

পিবিএ,ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী সন্তান। তাই কমিশনের কর্মকৌশল প্রণয়নে সর্বপ্রথম আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ধারণা, সৃজনশীল ভাবনা এবং সর্বোপরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য এ জাতীয় মতবিনিময় সভা এটাই প্রথম।’

রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯’-এর ওপর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় করেন দুদক চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যানের সূচনা বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না রিফাত আরা বলেন, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে দুর্নীতি করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান বলেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা না গেলে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তিনি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরা রহমান বলেন, খাদ্যে ভেজাল দুর্নীতি। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এ দুর্নীতি করছেন এবং তারাই নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কৃষি ভর্তুকির অর্থ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পোঁছানোর আগেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি হয়।

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মিয়া বলেন, ‘আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কিনা, এটি বড় প্রশ্ন।’ দুর্নীতিকে একটি চেইন অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, নিচের দিকে কর্মরত কর্মকর্তারা জানেন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দুর্নীতিপরায়ণ। তাই দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামস আসিফ চৌধুরী বলেন, দুদক স্কুল পর্যায়ে সততা সংঘ গঠন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এথিকস ক্লাব গঠনের আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা মহাজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং ফল চান। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টোটন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, দুর্নীতি যারা করেন তাদের ভয় ও লজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একসময় বলা হতো অর্থই অনর্থের মূল। কিন্তু সব সময় নয়। অর্থ মানেই ক্ষমতা। অনেক সময় মানুষ অর্থের পেছনে ছুটে। এটাতে তারা এখন আর লজ্জা পায় না। তাই দুর্নীতিবাজদের লজ্জা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা এবং মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নয়নের প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুদককে ভয় পায় না এমন লোক হয়তো সমাজে নেই। তবে ভয় দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না।

এ সময় দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং লোভের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। আপনার বলছেন শাস্তি হয় না। তথ্যটি সঠিক নয়। এবারও ৬৩% মামলায় সাজা হয়েছে। আমরা হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতি কমাতে পারিনি। এই ৬৩% সাজা কিন্তু এমনিতে হয়নি। এটি আমাদের সবার ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল। আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি, কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...