বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি টিম অষ্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগার বাহিনী। টানা তিনটি টি-২০ ম্যাচে অষ্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজ ইতিমধ্যেই নিজেদের করে নিয়েছে। বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের সামনে দাড়াতেই পারেনি অষ্ট্রেলিয়া দল। এখন অপেক্ষা হোয়াইট ওয়াশের। ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে এটাও সম্ভব। বাঙালি ক্রিকেটপ্রিয় জাতি। বাংলাদেশ ভালো খেললে আমরা উচ্ছসিত হই। এই করোনাকালের মহাদুর্যোগে যখন আমাদের মন প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনায় সিক্ত হচ্ছে তখন এই বিজয় আমাদের আনন্দ দেয়। মুখে হাসি এনে দেয়। বাংলাদেশে এখন রয়েছে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ক্রিকেট। আমার বিশ^াস বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের প্রতিটি অধ্যায় এদেশের মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। প্রতিটি বিশ্ব শক্তির বিরুদ্ধে জয়ের এক একটা ইতিহাস আমাদের মনে আছে। ফুটবলের আলো এদেশে বহুবছর ম্রিয়মান। তবে ক্রিকেটটা গত কয়েক বছর ধরেই অধিক উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে। বাঘা বাঘা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করেছে আমাদের টাইগারা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষের আনন্দের একটি বড় উৎস হলো ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি, ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবি,ক্রিকেট নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নের কথা আজ না বলি। ক্রিকেট আমাদের কাছে আবেগ। আর ক্রিকেটের অগ্রভাগে থেকে যে লড়াকু সৈনিকরা ক্রিকেটকে আজকের অবস্থায় এনেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম,মুশফিকুর,মুস্তাফিজ,লিটন,সৌম্য, তাসকিন, মিরাজ এবং যারা এখন খেলছেন সবাই। দেশের বোলিং লাইন আপ অত্যন্ত শক্তিশালী তা গত তিনটি ম্যাচে প্রমাণ রেখেছে। ব্যাটিংয়ে ওপেনিংয়ে ভালো যায়নি তবে আশা করা যায় দ্রুতই তারা ঘুরে দাড়াবে। তাদের জন্যই আমাদের আজকের ক্রিকেট বিশ^ প্রতিযোগীতায় সগর্বে অবস্থান করছে। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে অর্জন তা যেন গোটা বিশ্ব দেখছে। সমন্বিত নৈপূণ্যে বাংলাদেশ দল আজ কোথায় পৌছে যাচ্ছে তা যেন কোন সীমায় বাধা যায় না। বিগত দুই বিশ^কাপেই আমাদের দেশ ভালো খেলেছে। আমরা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। বিশ^কাপ আমাদের কাছে একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বিশ্বকাপ একদিন বাংলার সোনার ছেলেরা এই দেশের মাটিতে নিয়ে আসবে এ আমাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকেই আমরা সবসময় আমাদেও ক্রিকেটাদেও পাশে থাকি, তাদেও উৎসাহ দেই অনুপ্রেরণা দেই।
আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে অবস্থায় দাড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেটাররা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া বিজয় অর্জন করা যায় না। মাশরাফির নেতৃত্বে অন্য এক বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। তার রেখে যাওয়া বাংলাদেশ দল আজ অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছে। মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্ব প্রশংসার দাবিদার। তার সুদক্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে সে একজন যোগ্য নেতা। বর্তমান ক্রিকেট দল আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের যেকোন সময়ের চেয়ে সেরা পারফরম্যান্স করা একটি দল। এই দল একটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল। যেখানে নিখাদ ব্যাটসম্যান, বোলার এবং অলরাউন্ডারের সমন্বয় রয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি দল হয়ে উঠতে পেরেছে।
দল জয় লাভ করলে আমরা দারুণ উচ্ছসিত হই আবার দল হারলে আমাদের চোখেও জল আসে। আমরা ব্যথিত হই। এটা আমরা করি কারণ আমরা যেমন ক্রিকেটকে ভালোবাসি তেমনি ক্রিকেটারদেরও ভালোবাসি। সামর্থ্যরে বেশিও হয়তো মাঝে মাঝে আমরা আশা করি! এটাও ভালোবাসার দাবি থেকেই। তাই সেই আশা যখন অনেক বেশি অপূরণ থাকে তাহলে খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক। টি-টুয়েন্টি সিরিজে যে দাপট দিয়ে বাংলাদেশ দল শুরু করেছে তা পরবর্তী সময়েও ধরে রাখতে হবে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখ একটি ভালো দলের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাতে আমাদের দেশের মানুষকে আশায় ভাসিয়েছে। করোনা মহামারী না থাকলে দর্শক ভর্তি থাকতো মাঠে। সেই দৃশ্য হতো অন্যরকম। দেশের পতাকা নিয়ে, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোশ পরে দর্শকদের উল্লাস দেখা যেতো। এসব করে আমাদের ভালবাসা প্রকাশ করি। কারণ সেই আবেগ। ক্রিকেটটা আমাদের কাছে আবেগের নাম। মাঠে আমাদের দর্শকরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে। আমরা এভাবেই আমাদের ক্রিকেট দলকে নিয়ে চিৎকার করতে চাই। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে চাই তাকিয়ে দেখ আমরা ক্রিকেট জগতে রাজত্ব করতে এসেছি। এই অর্জনকে যদি কেউ এখনও খাটো করে দেখেন তাহলে আজও তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ এই বাংলাদেশ সত্যিই পাল্টে গেছে। এই বাংলাদেশ আগামী বিশ^কাপের দাবীদার। ওয়ানডে,টি টুয়েন্টি বা টেষ্ট যেকোন ফরম্যাটেই আমাদের লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জিততে পারি। তবে টেষ্ট ক্রিকেটে আমাদের আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। উইকেটে টিকে থাকার মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। সারা বিশ^ই বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখে। জয় পরাজয় একটি খেলার জাতগত বিষয় হলেও আমরা এমন অবস্থানে পৌছেছি যখন খেলোয়াড়রা বিশ^মানে। বিশ^কাপ হাতে নিয়ে একদিন এই উচ্ছাস হবে- এ আশা আমরা নিশ্চয়ই করতে পারি।
অলোক আচার্য,সাংবাদিক ও কলামিষ্ট