পিবিএ,নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে তিন নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করায় প্রধান আসামি স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কমিটির বক্তব্যমতে, নির্যাতিতদের মুখমণ্ডল ও শরীরে আঘাতে জমে যাওয়া ছোপ ছোপ রক্তের দাগ রয়েছে।
তাদের মুখমণ্ডল বীভৎসভাবে ফুলে গেছে। নির্যাতনে সারা দেহে কাটা-ছেঁড়ার চিহ্ন। কেটে দেয়া হয় চুল, পরানো হয় জুতার মালা। দেখলেই বোঝা যায়, কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই তিন নারী।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং উপ-পরিচালক গাজী সালা উদ্দিন।
নির্যাতনের শিকার ফাতেমা বেগমের পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর বন্দর থানা পুলিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউসুফ মিয়ার নির্দেশ ছাড়া মামলা নেয়া যাবে না বলে জানিয়েছে।
তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসায় শেষ পর্যন্ত বন্দর থানায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। সোমবার ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত ইউসুফ মেম্বারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়।
সোমবার বন্দর ইউনিয়নের কলাবাগ খালপাড় এলাকায় সরেজমিন জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় বাস করেন ফাতেমা বেগম। তিনি সুদে টাকা দিয়ে সংসার চালান। স্থানীয় বাসিন্দা জীবন ও উম্মে হানীকে ২ দফায় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন ফাতেমা।
এ নিয়েই তাদের মধ্যে বিরোধের শুরু। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফের কাছে বারবার গেলেও তিনি ফাতেমাকে উল্টো শাসিয়ে দিতেন। একপর্যায়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এহসানের নাম ব্যবহার করে তাকে এলাকা ছাড়তে বলা হয়।
ফাতেমার ছেলে সোহাগ জানান, জীবন, মুরাদ, পোলট্রি ফার্মের মালিক সুমনসহ ২০-২৫ জন বাড়িতে হামলা করে। এ সময় আমার ৫ বছরের ভাগ্নে আবদুল্লাহকে পানিতে ছুড়ে ফেলা দেয়া হয়। আমরা থানায় যাওয়ার পর পুলিশ মামলাও নেয়নি।
তদন্ত কমিটির বক্তব্য, শিশু আবদুল্লাহ এখনও লোকজন দেখে চিৎকার করে উঠছে। তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ভিকটিম ফাতেমা ও তার বোনের সঙ্গে কথা বলেছি। এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি।
আমরা জানতে পেরেছি, ঘটনার শিকার ফাতেমা বেগম স্থানীয় জীবন ও তার স্ত্রী উম্মে হানীর কাছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা পেতেন। তিনি সুদে ওই টাকা ধার দিয়েছিলেন।
মূলত পাওনা টাকা চাওয়া নিয়েই জীবনের পরিবারের সঙ্গে ফাতেমার বিরোধ ছিল। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফও ভিকটিম ফাতেমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং উম্মে হানীদের লেলিয়ে দেন।
ভিকটিম ফাতেমা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর তারা থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো ইউসুফ মেম্বারের নির্দেশ ছাড়া মামলা নেয়া যাবে না বলে জানিয়েছে।
তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, ঘটনার দিন জীবন ও তার লোকজন ফাতেমার বাড়িতে এসে হামলা করে তাকে ও অপর ২ নারীকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে চুল কেটে দেয়া হয়।
বাড়িঘর ভাংচুর করে, নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার লুট করে। সেখানে থাকা ফাতেমার নাতি ৫ বছরের শিশুকে পাশের ডোবার পানিতে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়। সবার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু জানান, এমন নির্যাতন সভ্য সমাজের ঘটনা বলে মনে হয় না। ঘটনার পরপরই বন্দর থানার উচিত ছিল অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া কিন্তু তারা সেটি করেনি।
থানা মামলাটি নিলে আমি ফাতেমার পরিবারের পক্ষে স্বেচ্ছায় মামলা আদালতে পরিচালনা করব। জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর রশীদ বলেন, আমরা ভিকটিমের পক্ষ থেকে মামলা নিয়েছি।
পিবিএ/এফএস