ইমরান হোসাইন ,কুবি: অতিরিক্ত শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন পার্ক, স্থানীয়দের ডিজে পার্টি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দিনরাত উচ্চ শব্দে গান-বাজনার কারণে শ্রেণিকক্ষের স্বাভাবিক কার্যক্রম, পরীক্ষা ও আবাসিক হল বা ছাত্রাবাসে ঘুমেরও বিঘ্ন ঘটছে অভিযোগ তাদের।
গত মঙ্গলবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা চলাকালে পার্শ্ববর্তী পার্ক থেকে আসা গানের শব্দে বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা৷
বিশ্ববিদ্যলয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসলাম আল জাহিদ বলেন, আজকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর থেকে পাশ্ববর্তী রিসোর্ট থেকে ডিজে গানের উচ্চ শব্দের আওয়াজ অনবরত আসছিল। পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গানের উচ্চ শব্দ শুনতে শুনতে পরীক্ষা শেষ করা লাগলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অনবরত শব্দ দূষণের ফলে আমাদের পরীক্ষার সময় বিরক্তিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে।
এর আগে টানা দুই থেকে তিনদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল সংলগ্ন স্থানীয়দের এক সামাজিক অনুষ্ঠানে দিনরাত ডিজে পার্টির উচ্চ শব্দ নাজেহাল হওয়ার অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহাগ মনি বলেন, উচ্চ মাত্রার সাউন্ডে গান বাজানোয় হলে আমাদের পড়াশুনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। আমাদের এ সমস্যার ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে মনে করি।
শব্দদূষণে পরীক্ষার হলে বিড়ম্বনার শিকার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, এত জোরে সাউন্ড হচ্ছিলো যে পরীক্ষার হলের মধ্যে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের কনসানট্রেশন ব্রেক হচ্ছিলো। আমরা জানালাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। বেশ সমস্যাই হয়েছে আমাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাফায়িত সিফাত বলেন, শব্দদূষণও কিন্তু পরিবেশ দূষণের অংশ। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন রয়েছে, তবে মানুষের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা কম। গত কয়েকদিন ধরে এই সমস্যার কারণে ক্যাম্পাসে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছি। প্রশাসনের কাছে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুবি সংলগ্ন স্বপ্নচূড়া পার্কের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, পরীক্ষার মাঝে গান বাজানো হয়েছে বিষয়টা জেনে আমরা লজ্জিত। আমরা পর্যটকদের জানিয়েছি যেন সাউন্ড কমিয়ে দেয়। সামনে থেকে যথাসম্ভব সাউন্ড কমিয়ে রাখার চেষ্টা করবো।
শব্দদূষণের বিষয়ে কুবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিষয়টা জেনেছি। কর্তৃপক্ষকে জানাবো যেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ২০ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়৷ যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর চারপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল ও আবাসিক এলাকায় ৪৫-৫৫ ডেসিবল। তবে এই নির্ধারিত মাত্রা মানতে শব্দদূষণে সংশ্লিষ্টরা সচেতনতা দেখাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব। গতবারও রিসোর্টগুলোকে অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারনে নোটিশ করেছিলাম। এখন আবার নোটিশ করতে হবে মনে হচ্ছে।