কুবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন, একই আদর্শে ফাটল

ইমারন হোসাইন,কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন-২০২২ এ আবারো পাল্টাপাল্টি প্যানেল ঘোষণা করেছে আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুটি অংশ। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ প্রশ্ন রাখছেন “একই আদর্শে ফাটল কেন?”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, দুটি বঙ্গবন্ধু পরিষদ থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিছু শিক্ষক নিজেদের স্বার্থ ঠিক রাখতে নতুন করে এসব খুলেছে। নতুন পরিষদের যারা আছে তারাই এক সময় আগের বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকে নির্বাচন করেছে। আর সবার আদর্শ যেহেতু বঙ্গবন্ধু তাহলে একই আদর্শে ফাটল কেন?

বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুই অংশের দিকে তাকালে দেখা যাবে এক অংশে আছে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির হোসেন। এ অংশটি মিজান-নাসির অংশ নামেই অধিক পরিচিত।

আবার, বঙ্গবন্ধু পরিষদের আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুলহাস মিয়া। এ অংশটি নন্দী-জুলহাস অংশ নামেই অধিক পরিচিত।

গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু পরিষদের মিজান-নাসির ও নন্দী-জুলহাস অংশ পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহীর ১৫ পদে প্রার্থী ঘোষণা দেন।

শিক্ষকদের দুইটি অংশের সংবাদ সম্মেলনে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বঙ্গবন্ধু পরিষদের (মিজান-নাসির) অংশ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ এমদাদুল হক।

কাজী ওমর সিদ্দিকী ও এমদাদুল হকের নেতৃত্বে সহ-সভাপতি পদে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল হাছান, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ পদে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান রাহাত, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিবুল্লাহ নির্বাচন করবেন।

এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাহেদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আওলাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক সংগীতা বসাক।

অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু পরিষদের (নন্দী-জুলহাস) আরেকটি অংশ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ (নন্দী-জুলহাস) থেকে সহ-সভাপতি পদে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমান মাহবুব ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিহির লাল ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আবুল হায়াত, কোষাধ্যক্ষ পদে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ রাজু, সাহিত্য, সংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হুমায়ূন কাইসার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. আবু বকর সিদ্দিক নির্বাচন করবেন।

এছাড়া এই প্যানেল থেকে কার্যকরী সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শামিমুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহের নিগার, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক হোসেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. কাউছার আহমেদ পাটওয়ারী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মশিউর রহমান, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: ফরহাদ হোসেন ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: সিদ্দিকুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের মিজান-নাসির প্যানেলের সভাপতি ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে একদল একটা নতুন বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করে এবং প্যানেল দিয়ে শিক্ষক সমিতি নিবার্চন করে। আর আমাদের অংশটা ২০১০ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদ পরিচালনা করে আসছে। ২০২০ সালে যখন ওরা নতুন পরিষদ গঠন করে তখন অনুমোদনের প্রশ্নটা আসে। কারণ, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের অনুমতি নিয়ে এবারের ড. মিজান ও নাসির প্যানেলটা দিয়েছে। এছাড়া বাকি যারা বঙ্গবন্ধু নামে পরিষদ পরিচালনা করছে তাদের কোন বৈধতা নেই।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের নন্দী-জুলহাস প্যানেলের সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, অন্য পক্ষের কেউ যদি কিছু বলে সেটা খন্ডানোর সুযোগ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকেই আমি জয়েন করেছি। বঙ্গবন্ধু পরিষদে শুরু থেকেই ছিলাম। সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি। এটা আদর্শিক চর্চা যে কেউ করতে পারে, এ জায়গায় বিরোধ নেই। বঙ্গবন্ধু আদর্শ ধারণ করে কাজ করাটাই বড় কথা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন...