সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় পাঠানোর কথা বলে মেরিন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে আসছিলেন মির্জা মুকুল (৪৫)। আড়াই বছর আগে ওমানফেরত মুকুল ২৫০-৩০০ মানুষের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সিআইডি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি টিম ভাটারা থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
এসময় মুকুলের কাছ থেকে ২৬টি পাসপোর্ট, তিনটি স্বয়ংক্রিয় সিলমোহর, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ট্রেনিং পাসের কার্ড ৩৫টি, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিংয়ের ভুয়া যোগদানপত্র, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর লেখা ও ছবি সংবলিত পাসপোর্টের আবেদন ফরম ২৫টি, মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, আসামি মুকুল ৯ বছর ওমানে ছিলেন। তিনি ওমানে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওমান থেকে ফিরে মুকুল প্রতারণা শুরু করেন। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে দক্ষ ছিলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম বলেন, ‘মুকুল দীর্ঘদিন ওমানের একটি পোর্টে কাজ করেছেন। ফলে তার কাজও পোর্ট সংক্রান্ত ছিল। তিনি বিভিন্ন কৌশলে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে যুক্ত হন। অস্ট্রেলিয়ায় খ্রিস্টানদের ব্যাপক চাহিদার কথা বলে ভুক্তভোগীদের প্রলোভন দেখাতেন। তাদের (খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের) মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর প্রলোভনে ৬০ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা করে নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডায় পাঠানোর কথা বলে মুকুল ১২ জনের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। প্রতারক মুকুল ভুক্তভোগীদের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠার জন্য মেরিন একাডেমির ট্রেনিংয়ের জন্য ছবি নকল করে আইডি সরবরাহ করতেন। মুকুল ৬০ জন ভুক্তভোগীকে জানিয়েছিলেন, বিদেশি ডেলিগেট আসবে ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর। প্রথমে চট্টগ্রাম পরে ডেলিগেটের সঙ্গে কক্সবাজারে দেখা করানোর জন্য ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। ডেলিগেটরা চট্টগ্রাম গেছে এবং সবাইকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্যও বলেন তিনি। চট্টগ্রাম গিয়ে ভুক্তভোগীরা মুকুলকে মোবাইল ফোনে আর পাননি। পরে ভিকটিমারা বুঝতে পারেন, তারা প্রতারিত হয়েছেন।’
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম আরও বলেন, ‘আসামি ও পলাতক অন্যান্য আসামি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পোর্টে চাকরির নকল নিয়োগপত্র সরবরাহ করতেন। প্রতারণার মাধ্যমে সহজ-সরল লোকদের ঠকিয়ে প্রায় ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম আরও বলেন, ‘এ চক্রের সঙ্গে আরও দুই থেকে তিন জন যুক্ত থাকতে পারে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দুই থেকে আড়াই বছর ধরে মুকুল প্রতারণা করে আসছিলেন।’