হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবা। তিনি তাঁর জীবনের তিন পর্যায় অতিক্রম করেছেন। এক সময় তিনি প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন। পরে তিনি পেয়েছেন সঠিক পথের দিশা। হেদায়েতের এ পথই ছিল তাঁর জীবনে সর্বোত্তম পূঁজি। তাঁর জীবনের তিনটি পর্যায়ই মুমিন মুসলমানের জীবনের সর্বোত্তম পূঁজি অর্জনের অনুপ্রেরণা। কী সেগুলো?
মানুষ যে কাজের ও মূলধন থেকে সম্পদ অর্জন করে, এ কাজ ও মূলধনই তার সর্বোত্তম পূজি। তাহলে মুমিন মুসলমানের সর্বোত্তম পূঁজি কী? মুমিনের পূঁজি সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন?
মুমিনের সর্বোত্তম সম্পদ বা পূঁজি হলো ঈমান। আর তাহলো- আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তাওহিদ ও রেসালাতের এ বিশ্বাসই মুমিন মুসলমানের জীবনের সর্বোত্তম পূঁজি। এ পূঁজিই মানুষকে সব গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়। হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণ ও জীবনের তিনটি পর্যায়ে তা এভাবে ফুটে ওঠেছে-
হজরত ইবনু শিমাসাহ আল মাহরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, তখন আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদছিলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ করে ভাবছিলেন। এমন সময় তাঁর ছেলে বলতে লাগলো-
‘হে আব্বা! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে এই সুসংবাদ দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদের কথা বলেননি?
বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি মুখ ফেরালেন এবং বললেন- ‘অবশ্যই আমরা যা কিছু পুঁজি সঞ্চয় করেছি তন্মধ্যে- (সর্বোত্তম হলো)-
‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল- সবচেয়ে উত্তম সঞ্চয়।’
তারপর হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিজের জীবনের তিনটি পর্যায় অতিক্রমক করার ঘটনা বললেন-
প্রথম পর্যায় : নবিজীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আমার চেয়ে বেশি বিদ্বেষ পোষণকারী আর কাউকে দেখিনি। তখন আমার ইচ্ছে ছিল এমন যে- যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে তাঁকে হত্যা করে মনের ঝাল মেটাবো।
দ্বিতীয় পর্যায় : ইসলাম গ্রহণ
এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের প্রেরণা ঢেলে দিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললাম, ‘আপনার ডান হাত সামনে বাড়িয়ে দিন। আমি আপনার কাছে বাইআত গ্রহণ করবো।
তিনি তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলে আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমর! তোমার কি হলো?
আমি বললাম- আমি কিছু শর্ত করতে চাই।
তিনি বললেন- তুমি কী শর্ত করতে চাও?
আমি বললাম- এ শর্ত করতে চাই যে, আমাকে ক্ষমা করা হোক।
তিনি বললেন, হে আমর! তুমি কি জান না! ইসলাম গ্রহণ জীবনের আগের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেয়? হিজরত ও হজের দ্বারাও অনুরূপভাবে জীবনের আগের সব অপরাধ ধ্বংস হয়ে যায়?
তখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি আমার কাছে বেশি প্রিয় ছিল না। বস্তুত আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন কোনো সৃষ্টিও ছিল না।
তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার এমনই এক প্রভাব ছিল যে, আমি কখনো তার চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারতাম না। যদি কেউ আমাকে তাঁর দৈহিক গঠনের বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করতো, তাও আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমি আশা করতে পারতাম যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
তৃতীয় পর্যায় : ইসলামের অনুসরণ
ইসলাম গ্রহণের পর আমার উপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ন্যাস্ত হলো। কিন্তু আমি এ বিষয়টি অবগত নই যে, এগুলোর মধ্যে আমার (দায়িত্ব পালন ও জবাবদিহিতার) অবস্থা কেমন হবে।’ (মুসলিম)
এ ছিল নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবন অতিবাহিত হওয়ার পর্যায়। গুনাহমুক্ত জীবনের ঘোষণা পাওয়ার পরও যিনি শুধু তাওহিদের কালেমাকে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পূঁজি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’
এ হাদিসেও তা-ই প্রমাণ করে যে, মুমিন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম পূঁজি হলো তাওহিদের কালেমা ও রেসালাতের স্বীকৃতি। যারা এ কালেমার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের পরিচালিত করতে পারবে; নিজেদের প্রকৃত মুসলিম হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে; তারাই পাবে গুনাহমুক্ত জীবন এবং পরকালের সফলতা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের মূল্যবান নেয়ামত ও সর্বোত্তম পূঁর্জি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। জীবনের সব গুনাহ থেকে মুক্তি দিন। আমিন।