মাসে পাঁচ হাজার টাকার চুক্তিতে একজনের পরিবর্তে আরেক জনের জেল খাটার ঘটনায় দুই আইনজীবীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে জড়িত বাকিদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরী কোতোয়ালি থানার পরিদর্শককে (তদন্ত) এ বিষয়ে এজাহার তৈরির নির্দেশ দেন।
এর আগে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের পেশকার মিজানুর রহমান মামলার আবেদন করে ঘটনায় জড়িত চারজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
আদালতের নির্দেশে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মো. হোসেন (সোহাগের পরিচয়ে জেল খাটা), জামিন আবেদন এবং ওকালতনামায় সই দেওয়া আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজী ও অপর আইনজীবী মো. ইব্রাহীম হোসেনের নাম রয়েছে।
এছাড়া ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরও মামলায় আসামি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে জাল কাগজ তৈরি, ভুয়া পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি সাজানোর দায়ে এজাহার করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রায় ১১ বছর আগে একটি হত্যাসহ দুটি মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগকে (৩৪) গত শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর রোববার র্যাব জানায়, তার পরিবর্তে তিন বছর ধরে সোহাগ সেজে কারাগারে রয়েছেন আরেকজন। কারাগারে যিনি রয়েছেন তিনি সোহাগেরই ফুপাত ভাই মো. হোসেন (৩৫)।
মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জেল খাটছেন তিনি। আত্মসমর্পণের দুই-তিন মাসের মধ্যে নকল সোহাগকে কারাগার থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আসল সোহাগ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার কদমতলী থানার আউটার সার্কুলার রোডের নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটু নামে এক ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। তাতে বড় সোহাগকে এক নম্বর এবং মামুন (৩৩), ছোট সোহাগসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়।
সেই মামলায় একই বছর ২২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বড় সোহাগ। পরে ২০১৪ সালের ১৬ মে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি গা ঢাকা দেন। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মামলার রায়ে বড় সোহাগকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের পর ‘সোহাগ’ পরিচয় দিয়ে তার ফুপাত ভাই ‘হোসেন’ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজনের জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান আদালত।
সেই প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করা আসামি সোহাগ এবং হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
বিষয়টি জানার পর গত বছর অগাস্ট থেকে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে আদালত প্রকৃত আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এ তথ্য জানতে পেরে সোহাগ দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে। জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করে।
দেশত্যাগের ক্ষেত্রে কোভিড টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল আসে বড় সোহাগ। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলা ও ছয়টি মাদক মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে টিটু হত্যাসহ দুটি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে।