পিবিএ, ঢাকা– নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারাবাহিক কোন প্রক্রিয়া নেই। তবে যে প্রক্রিয়াতেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন নির্বাচনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে দিবে না কমিশন।
সোমবার সকালে, নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, দেশে নানা সময় নানা প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীন কিংবা কখনো দলীয় সরকারের অধীনে। তবে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেই প্রক্রিয়াই হোক না কেন তাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে দেয়া যাবে না। দেশে নির্বাচনের কোন ধারাবাহিক রীতি গড়ে না উঠলেও একটি পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে এই ধারাবাহিকতা ও ঐহিত্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছে কমিশন। সেজন্য জনমনে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, প্রার্থী যেন নিশ্চিন্ত থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে চাওয়া খুবই সামান্য, একজন ভোটার যেন নির্ভয়ে পছন্দমত তার প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সেই আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০-১২ লাখ কর্মকর্তা যুক্ত হবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনিয়ম রোধ ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা জেনে নিতে তিনি নির্দেশ দেন। কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে তা জেনে নিবেন। পুলিশ বা সামরিক কর্মকর্তাদের চেয়ে আপনাদের ক্ষমতা কোন অংশে কম নয়। তবে নির্বাচনের দায়িত্বে এসব কর্মকর্তাদের শিথিলতা কমিশন বরদাস্ত করবে না বলেও জানান মাহবুব তালুকদার। নির্ভয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। আপনারা সফল হলে উদ্ভাসিত হবে পুরো জাতি। যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমরের মতো নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাফল্যের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করতে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় দৃঢ় থাকারও নির্দেশ দেন মাহবুব তালুকদার। তিনি আরো বলেন, আইন ঠিক মত না চললে সমান সুযোগের পরিবেশ নিশ্চিত হবে না। আইন ঠিকভাবেনা চললে সেটি আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। আইন প্রয়োগ ঠিকভাবে না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, আর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলঙ্কিত হতে চাই না।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা এসব কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের শপথের অংশীদার উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমাদের শপথ আপনাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। আপনারাও মনে মনে শপথ গ্রহণ করুন, দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবেন। আপনাদের দায়িত্বশীল আচরণই দেশে এক সোনালী অধ্যায়ের রচনা করবে। মনে রাখতে হবে, আপনারা জাতির ক্রান্তিলগ্নে মহান দায়িত্ব পালন করছেন। আপনাদের সাফল্যে গৌরবদীপ্ত হবে, উদ্ভাসিত হবে দেশের জনগন। বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার সুযোগ এই নির্বাচন। আমরা বিশ্বের সামনে আমাদের সম্ভ্রম খোয়াতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের আত্মদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করে সবার প্রতি সমান প্রয়োগ করার আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। বলেন, আসুন শুদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মনোনয়ন অবৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশনে আপিলের সুযোগ পাবেন। ৬-৮ ডিসেম্বর আপিলের বিষয়ে নিষ্পত্তি করবে কমিশন। এর আগে, প্রার্থীদের মনোনয়ন জমাদান প্রক্রিয়া বেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেন নির্বাচন কমিশন সচিব। তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে ১৩ই ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবে কমিশন। মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশনা দেয়া হবে ওই বৈঠকে। ১৩ই ডিসেম্বরের পর কমিশনারগণ বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে দিক-নির্দেশনা দিবেন বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক। প্রশিক্ষণে কয়েক ধাপে অংশ নিচ্ছেন সারা দেশের মোট ২০২৬ জন কর্মকর্তা। সোম ও মঙ্গলবার নয়টি জেলার মোট ৪০৮জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
পিবিএ/এমটি/এইচএইচ