পিবিএ ডেস্ক : এক শ্রেণির মানুষ নিজের মতো করে অমানবিক, দানবিক ও পাশবিক ধর্ম তৈরি করে দেশের ইতিহাস বদলে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিন আগেই তিনি বিজেপি, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দিকে আঙুল তুলে অশান্তির আগুন জ্বালছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সরাসরি বিজেপি বা সংঘ পরিবারের নাম উচ্চারণ না করেও দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওদের এত সাহস যে নিজেদের মতো আইন করে বলবে কে কোথায় থাকবে, কে কোথায় থাকবে না? এত সাহস ওদের যে ভাবছে যে শুধু ওরা থাকবে, আর বাকিদের বের করে দেবে! এসব বরদাস্ত করা হবে না।’
ঘটনাচক্রে এদিনই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের(ভিএইচপি) সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈন কলকাতায় এসে বলেন, ‘পুলওয়ামার ঘটনার পর সাধারণ মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। তাই তারা প্রত্যাঘাত শুরু করেছেন। আমরা একে পূর্ণ সমর্থন করি। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারাই আসল দেশদ্রোহী। তাদের ডান্ডা মারা উচিত।’ যে মন্তব্যকে সমর্থন করেছে রাজ্য বিজেপি। তৃণমূলের মতোই সিপিএম ও কংগ্রেস এক সুরে এ ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে।
পুলওয়ামাকাণ্ডের পরে এ রাজ্যসহ দেশের নানা প্রান্তে যেভাবে ‘দেশপ্রেমের নামে’ মানুষকে হুমকি দেওয়া, মারধর ও গোলমালেরঘটনা ঘটছে, তা কড়া হাতে মোকাবিলায় প্রশাসনকে আগেই নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এবার বাংলার মানুষকে এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আবেদন করে তিনি বলেন,‘যে কাশ্মীরি শালওয়ালা রোজ এসে শাল দিয়ে যান, হঠাৎ তাকে দরজা থেকে বের করে দেব? যে চিকিৎসক ২০ বছর ধরে এখানে চিকিৎসা করছেন, হঠাৎ করে তার উপর হামলা হবে কেন? কারা এত লাটসাহেব?’ মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘এ রাজ্যের শিক্ষা, সংস্কৃতি বাঁচাতে সকলকে দৃঢ়চেতা হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ভারত এক থাকুক। ভারত মাথা তুলে দাঁড়াক। ভারত উগ্রপন্থার দেশ হতে পারে না। ভারত চিরকালই তেজস্বী। সব ধর্ম, ভাষার মানুষকে আপন করে নিতে হবে। সকলকে ভালবাসতে হবে। যারা এখানে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করছে, তাদের ঘৃণা করি না। কিন্তু আমার মনে আগুন জ্বলে। ওদের মেনে নিতে পারি না ‘
অন্যদিকে ভিএইচপি নেতা সুরেন্দ্রের কটাক্ষ, ‘সেনার উপর হামলাকারী কাশ্মীরি, রোহিঙ্গা, অনুপ্রবেশকারীরাএ রাজ্যে আশ্রয় পাচ্ছেন। এটাই মমতার তোষণের রাজনীতি।‘ ভিএইচপির মন্তব্যের নিন্দা করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভিএইচপির থেকে কেউ দেশপ্রেম শিখবে না। দেশপ্রেমের নামে ওরা দাঙ্গা বাধায়। সমাজকে দ্বিখণ্ডিত করে। ওদের থেকে দেশপ্রেম শিখব না।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা বিশ্বাসঘাতক ছিলেন, তাদের মুখে এখন খই ফুটছে। যারা দেশের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছেন, দেশেরই মানুষকে মারার কথা বলছেন এবং জওয়ানদের মৃত্যুকে ব্যবহার করে ভোটে জেতার চেষ্টা করছেন, তারাই তো প্রকৃত দেশদ্রোহী।’ বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘ব্রিটিশ আমলে যারা চরবৃত্তি করে পুরস্কার পেয়েছে, তাদের কাছ থেকে দেশপ্রেম শিখব না। ওরা পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে না পেরে দেশের মানুষকে মারছেন। ওরাই তো দেশদ্রোহী।’
পিবিএ/জিজি