তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে অন্তরায় তামাক--০৩

তামাক থেকে মুক্তির উপায়

মোঃ এমদাদ উল্যাহ,পিবিএ: পরিবেশের দিক থেকে বিবেচনায় তামাকমুক্ত সমাজ স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ। উন্নত, স্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তামাকমুক্ত সমাজ গড়া প্রয়োজন। তামাক ও ধূমপান বর্জনের উপকারিতা অনেক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যারা ৩০ বছর বয়সের আগেই ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে পারে তারা ধূমপানজনিত কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। মূলত, একজন ধূমপায়ী যত বেশিই ধূমপান করুক, ধূমপানজনিত কারণে স্বাস্থ্যের যতই প্রতিক্রিয়া ঘটুক এবং তার যতই বয়স হোক না কেন ধূমপান বর্জন করার ফলে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাবার ঝুঁকিসমূহ অনেকাংশে কমে আসবে। অর্থাৎ বয়সের যে কোন পর্যায়ে ধূমপান বর্জন করলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়।

জানা গেছে, ধূমপান বর্জন করার ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি, খাবারের রুচি বৃদ্ধি, উন্নত ঘ্রাণ শক্তি, অর্থ অপচয় রোধ, অধিকতর আত্মবিশ্বাস এবং পরিষ্কার শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি উপকারিতা লাভ করতে পারেন। ধূমপান বন্ধের ফলে পিতা-মাতাগণ তাদের সন্তানদের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। এছাড়া নিজের ধূমপানের কারণে অন্যের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থেকে বিরত থাকা যায়। ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় এবং তামাকের যে আসক্তি তা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

তামাক বর্জনের অর্থনৈতিক সুফলও কম নয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি ছাড়াও তামাক অর্থনীতিতে বিরাট অপচয় ঘটায়। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথে ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার একটি বিরাট প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। ধূমপান বর্জনের ফলে যেমন সিগারেট ক্রয়ের খরচটি বেঁচে গেলে তা দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা ও শিক্ষার খরচসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মিটানো সম্ভব হয়।

ধূমপান ছাড়া খানিকটা দুঃসাধ্য হলেও অসাধ্য কিছু নয়। এটা সম্ভব। কিছু পরীক্ষিত উপায় আছে, যা ধূমপান ছাড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন-ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। যেহেতু কিছু উপসর্গ দেখা দেয় ছাড়ার সময়ে, তাই ডাক্তার সেগুলো ঠিক করতে ওষুধ দিয়ে ভালো করতে পারেন। নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপি। কিছু কিছু দেশ এই উপায় বের করেছে। তারা নিকোটিন চুইংগাম, চকোলেট উদ্ভাবন করেছে। নিকোটিন ইনহেলার, নিকোটিন ন্যাসাল স্প্রে বের হয়েছে- যা মস্তিষ্কে নিকোটিনের প্রভাবকে বন্ধ করে দেয়। মেডিটেশন-এই উপায়ে পেশী নির্মল উপায়ে শান্ত হয়। তা নিকোটিনের প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করে দেয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন। নিয়মিত ব্যায়াম,পরিমিত ঘুম, শখের কাজে ব্যস্ত থাকা-এইসবের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া সহজতর হয়। ধূমপান ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিটের মাঝে আপনার হৃদ স্পন্দন গতি কমে যাবে। মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে দেহে কার্বন-মনোক্সাইডের পরিমাণ কমতে শুরু করবে। মাত্র ৩ মাসের মাঝে, ফুসফুস আগের চেয়ে ভাল কাজ করবে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাবে। মাত্র ১ বছরের মধ্যে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যাবে প্রায় ৫০%। আর ৫-১৫ বছরের মধ্যে, একজন অ-ধূমপায়ীর মতো স্ট্রোক হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

তামাক ছাড়ার আরও কিছু পদ্ধতি হলো-১. নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৩. প্রেরণা ও সহযোগিতা। ৪. গ্রুপভিত্তিক পদক্ষেপ। ৫. প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে। ৬. নতুন নতুন কৌশল। ৭. তামাক বর্জনের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য ব্যায়াম করা, খেলাধুলা করা, বই পড়া এবং নামাজ, দোয়া, ধ্যান এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করা। ৮. প্রচুর পানি ও বিশুদ্ধ তরল খাবার গ্রহণ। ৯. আশপাশে যারা ধূমপান বর্জন করেছে তাদের অনুসরণ করা। ১০. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘তামাকাসক্ত তরুণকে তামাকমুক্ত রাখতে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে চলা উচিত’।

আরও পড়ুন...