তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে অন্তরায় তামাক- শেষ পর্ব

২০০৫ সালের আইনের বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

মোঃ এমদাদ উল্যাহ,পিবিএ: তামাক শ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ এবং ক্যান্সারকে এখন সবেচেয়ে বিস্তৃত করছে। এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিও মারাত্বক। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম কারণ তামাক। বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তামাকের কারণে মৃত্যুঝুঁকি কতোটা সক্রিয়। ২০৪০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে তামাক শতভাগ নির্মূল করার আশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সরকার ও সহযোগী সংগঠনগুলো কাজ করছে। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞাসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৫ সালের আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

জানা গেছে, দেশে সব স্তরের মানুষের মধ্যেই কমবেশি তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের অভ্যাস রয়েছে। এই অভ্যাসের সামাজিক ইতিহাসও ভিন্ন। কম দামে পেলে মানুষ অনেক কিছু খেতেই অভ্যস্ত। এক সময় বিড়ি এত সস্তা করা হয়েছিল যে শ্রমজীবী মানুষেরা মারাত্বক রকম এই নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এ নেশা থেকে এখনও শ্রমজীবী মানুষকে ফেরানো যায়নি। এ কারণে বিড়ি সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করাটা সময়েরই দাবি। কিন্তু যারা সিগারেট-বিড়ির ব্যবসা করেন তারাও তাদের বিপণন কৌশল পরিবর্তন করেছে। তামাক চাষীদের নগদ টাকা প্রণোদনা দেওয়া সেই কৌশলের অংশ। গ্রামের অনেক তামাক চাষীর ভাগ্য বদলে গেছে- কর্পোরেট সিগারেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে। কিন্তু সামাজিক বা পারিবারিক ক্ষতিটা হয়েছে বেশি।

২০০৫ সালের তামাকবিরোধী আইন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধানে প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোন ভাবে তামাকজাতদ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুব্ধকরণের উদ্দেশ্যে, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে প্রদান বা প্রদানের প্রস্তাব করা যাবে না। বিজ্ঞাপন প্রচার বা ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোন দান পুরুষ্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোন অনুষ্ঠানের ব্যায়ভার বহন করা যাবে না। বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোন সিনেমা, নাটক বা প্রমান্য চিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করা যাবে না। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে কোন প্রকার বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

কোন ব্যাক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডণীয় হইবে। উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণ হারে দন্ডণীয় হইবে।
কোন ব্যক্তি অনধিক আঠারো বৎসর বয়সের কোন ব্যক্তির নিকট তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় অথবা উক্ত ব্যক্তিকে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিপণন বা বিতরণ কাজে নিয়োজিত করবে না।
কোন ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, তামাক চাষের কারণে অনেক ফসলি জমিতে ধান, পাট ও ভুট্টা চাষ হচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটি দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন চরাঞ্চলে তামাক চাষের পরিধি বাড়ছে। এ সব জায়গাতে বিভিন্ন তামাক কোম্পানী বা সিগারেট কোম্পানীর প্রণোদনা নিয়ে চাষীরা প্রচলিত ফসলের বদলে তামাক উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কোনো ধরনের নজরদারি বা মনিটিরিং না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে ধারণা সচেতন মহলের। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচিত নজরদারি বাড়ানো।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করলে তরুণ-তরুণীরা তামাকের প্রতি নিরুৎসাহীত হবে। এক্ষেত্রে সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি দাবি করেন’।

আরও পড়ুন...