গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে চাঁদা আদায় করত চক্রটি

যাত্রীবেসে বাসে উঠে গাড়ির মূল কাগজপত্র চুরি করার পর হুমকির মাধ্যমে চাঁদা আদায় করার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাকিব মিয়া ওরফে তুফান (২৭), মো. শুকুর আলী (২৮), মো. হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামীম (২৫)।

এসময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি কাজে ব্যবহৃত সিমসহ ২টি মোবাইল সেট, বিভিন্ন বাসের চোৱাই উদ্ধারকৃত রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেনের মূল কপি জব্দ করা হয়।

সিআইডি জানায়, আটকে রাখা গাড়ির কাগজপত্র ফেরৎ দেওয়ার শর্তে মিরপুর লিংক, খাজাবাবা ও বিকল্প পরিবহন বাসের মালিকদেরকে মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে। অন্যান্য মালিকগণ মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রের মূল হোতা তুফান নাম পরিচয় দিয়ে মালিকদেরকে এমন হুমকি প্রদান করে যে “আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিকেরা মাসিক চাঁদা দেয়, কোন পরিবহনের মালিক মাসিক চাঁদা না দিলে আমি সমস্ত গাড়ীর কাগজ চুরি করেই যাব, ঢাকা শহরের কোন পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করতে পারবে না।” তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ীর মালিকগণ ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিষয়টি অবহিত করে সাধারণ ডায়েরী করেন। কিন্তু তাতেও কোন ফল না পাওয়ায় বাসের মালিকগণ বিষয়টি সিআইডি পুলিশকে অবহিত করেন।

রোববার (১৭ জুলাই) সকাল ১১টায় সিআইডির সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, একটি সংঘবন্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে ঢাকা শহরে চলাচলরত মিরপুর লিংক, শিকড় পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, প্রজাপতি পরিবহন, রবরব পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাসে যাত্রীবেসে উঠে অভিনব কায়দায় বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে। এরপর তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও ড্রাইবারদের নম্বর সংগ্রহ করে চোরাইকৃত প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, মালিকগণ প্রথমদিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িচালাতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতিসাধন ও চালকদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। কাগজপত্র বিহীন অবস্থায় রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকগণ চক্রের দেওয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে চোয়াইকৃত প্রতি গাড়ির কাগজের জন্য ৫/৭ হাজার টাকা বিভিন্ন বিকাশের মাধ্যমে তাদের দেওয়া হয়। তখন চত্রুটি টাকা পেয়ে কিছু গাড়ির কাগজপত্র ফেরৎ দেয় এবং কিছু কাগজপত্র আটকে রাখে।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করার লক্ষ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা হতে মোবাইল চুরি করে এবং ওই মোবাইল নিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন...