নাজমুল হুসাইন,ইবি (কুষ্টিয়া): রুক্ষতা, ভ্যাপসা গরম আর কোলাহলের বাইরে একমুঠো প্রাকৃতিক স্পন্দন ইবির লেক বা মফিজ লেক। সারি সারি গাছ, দীর্ঘ লেক, পরিচ্ছন্ন রাস্তা, পাখির কলরব, বসার সুব্যবস্থা -এ যেন ক্লান্ত ক্যাম্পাসে শান্তির নীড়।
লেকের পাড় দিয়ে আছে ছাউনিযুক্ত বসার সুব্যবস্থা। বন্ধুদের আড্ডা বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা মানুষদের উপস্থিতিতে ছাউনিগুলো থাকে মুখরিত। এছাড়া এসব ছাউনিতে জন্মদিন, বন্ধুদের বিশেষ উৎসবও হয়ে থাকে।
লেকের উপর দিয়ে দেখা মিলবে ব্রীজ। ব্রীজের উপর ছোট বড় আড্ডা জমে ওঠে। এখান থেকে দীর্ঘ লেকের দেখা মেলে বলে ঘুরতে আসা মানুষ ছবি তোলার জন্য এ জায়গাকে বেছে নেয়। লেকের পানিতে ব্রীজের প্রতিচ্ছবি সুন্দর দৃশ্যের তৈরি করে। আশপাশের সারি সারি গাছের দীর্ঘ সারি দেখলে মনে কোনো শিল্পীর সুনিপুণ হাতে আঁকানো এক অপরুপ চিত্র এগুলো। নিজ চোখে না দেখলে এর সৌন্দয্য বর্ণনা করা সহজ নয়।
লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপা রাণী বলেন, বিকেলে লেকের পাড়ে এসে আড্ডা, গল্প করতে ভালোই লাগে। এসময় বেশি মুখরিত থাকে লেক এলাকা এবং একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
লেকের বিভিন্ন জায়গাতে দেখা মিলবে রঙিন শাপলা ফুলের। ক্যাম্পাসের কোলাহল ছেড়ে কল্পনায় হারাতে পারেন ছোট্ট এক টুকরো হাতির ঝিলের স্মৃতিতে। দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, লতাপাতা, পানিতে জন্ম নেয়া অনেক উদ্ভিদ।
লেক পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শতশত গাছের দেখা মিলবে। ক্লান্ত হলে একটু বসে যেতে পারেন। কয়েকবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে পারেন, এতে আপনার অশান্ত মন কিছুটা হলেও শান্ত হবে। এছাড়া গাছের নিচে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন একজন ভিন্ন মানুষ হিসেবে। অন্য জায়গাগুলোর তুলনায় এ জায়াগাগুলো কিছুটা নিরবও থাকে। চাইলে একাকিত্ব কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে পারেন।
লেকের পাশে দেখা মিলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের যেখানে রয়েছে ঔষুধি, ফল ও কাঠসহ প্রায় ৮৫ প্রজাতির গাছ। দেশি-বিদেশি গাছের এক বিশাল জগৎ এই গার্ডেন।
লেকের একপাশে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। পানি আর গাছের মেলবন্ধনের দেখা মিলবে এ জায়গা থেকে। সাথে দেখতে পাবেন সূর্যাস্ত। একটা বিকেল এখানে কাটিয়ে দিতে আপনার খারাপ লাগবে না।
ভর দুপুরে গাছের ছায়ায় বসে ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিতে পারবেন। দূর দুরান্তের অনেকেই একটু বিশ্রাম নেন লেকের বসার জায়গাগুলোর ছাউনির নিচে।
বিভিন্ন সময়ে নাটক, কবিতা, গানের শুটিং ও হয় এই লেকে। এছাড়া প্রায় সন্ধ্যায় বাঁশির সুরে আর গানে মেতে ওঠে ছেলে-মেয়েদের আড্ডা। শিক্ষার্থী, কবি, শিল্পী, নানা বয়সের মানুষ বিকেল থেকে জায়গাটিতে ভীড় করতে থাকে। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভীড়ও কমতে থাকে। সবাই গন্তব্যে ফেরে লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধতা নিয়ে।