পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মনোমুগ্ধকর জায়গা

কৌতুহলী মানুষ আবিষ্কারের নেশায়, নতুন কিছু দেখার আশায় চষে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও রহস্যে ঘেরা এই পৃথিবীর বৈচিত্রপূর্ণ স্থান সম্পর্কে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই।

আর এই ছুটে চলার পিছনে শুধুই একটি কারন কাজ করে তা হলো আত্মতুষ্টি! তবে যদি এমন ভ্রমণ পিপাসুদের কাওকে প্রশ্ন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান কোনটি বা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কি তাহলে আমার মনে হয় সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে! কারন তার সৌন্দর্য দর্শনের তৃষ্ণা আজও মেটে নাই। আর এই তৃষ্ণা কখনো মেটারও নয়!

এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যা পৃথিবীর স্বর্গ বললে ভুল হবে না। আজ আমরা আপনাদেরকে জানবো বিশ্বের কিছু সৌন্দর্য স্থান সম্পর্কে।

১.সালার দে ইয়ুনি, বলিভিয়া :

সালার দে ইয়ুনি পৃথিবীর বৃহত্তম আয়না। বর্ষাকালে বলিভিয়ার বৃহত্তম এই লবণভূমি বিশাল এক প্রাকৃতিক আয়না তৈরি করে । যার আয়তন প্রায় ১০ হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত লবণের এই আশ্চর্য মরুভূমিকে দেখার জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ও ফটোগ্রাফা বলিভিয়ায় ছুটে আসে।
২.বারোস আইল্যান্ড, মালদ্বীপ :

পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপ অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রায় আড়াইহাজার ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপে অসংখ্য নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে। মালদ্বীপের হাজারো দ্বীপের মধ্যে বারোস অন্যতম সুন্দর একটি দ্বীপ। পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য এখানে রয়েছে প্রয়োজনীয় সমস্ত আয়োজন। সুনীল সাগর, আকাশ আর প্রকৃতির অপূর্ব মায়া বারোস আইল্যান্ডকে করেছে মোহনীয়।
৩. এন্টিলোপ ক্যানিয়ন, আরিজোনা :

রহস্যময় এই গিরিখাতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায়।মিলিয়ন বছর আগে পানির প্রবাহের কারণে সৃষ্টি হওয়া এই গভীর গিরিখাতের দেয়ালে সূর্য্যের আলো পৌঁছে অদ্ভুত আলোছায়া ও রঙের বৈচিত্র তৈরী করে পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
৪.প্যাংগং লেক,লাদাখ :

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে পাহাড় ও মরুভূমি বেষ্টিত ভারত-চীন সীমান্তবর্তী লাদাখে অনন্য রুপের আধার প্যাংগং লেক অবস্থিত।এটি একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে। সুনীল এই লেকের অপার সৌন্দর্য অবলোকন করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
৫. কিউকেনহফ, নেদারল্যান্ডস:

পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল বাগানের জন্য ন্যাদারল্যান্ডের কিউকেনহফ শহর বিখ্যাত।এটি বিশ্বের বৃহত্তম ফুলবাগান। একে “কিচেন গার্ডেন” বা “গার্ডেন অব ইউরোপ” খ্যাত বাগানে প্রায় ৩০ ধরনের ফুল রয়েছে।পঞ্চদশ শতাব্দীতে যাত্রা শুরু করা এই বাগানের বর্তমান জমির পরিমাণ প্রায় ৮০ একর। এই বাগান থেকে প্রতিবছর ৭০ লাখের বেশি টিউলিপ উৎপাদন করা হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে মানে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাগানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
৬.নর্দান লাইটস বা অরোরা, আইসল্যান্ড :

আকাশে রঙের ছড়াছড়ি অর্থাৎ নর্দান লাইটস বা অরোরা প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্য্য নিদর্শন। নরওয়ে, সুইডেন, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও গ্রীনল্যান্ড থেকে সন্ধ্যা এবং রাতের বেলায় অরোরা দেখা যায়। তবে আইসল্যান্ডে অবস্থিত পিংভেলার ন্যাশনাল পার্ক নর্দান লাইটস বা অরোরা দেখার জন্য জনপ্রিয় স্থান হিসাবে সুপরিচিত। ইউনেস্কো কতৃক বিশ্বের দর্শনীয় স্থান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই স্থানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক ছুটে আসে।
৭.হা লং বে, ভিয়েতনাম :

ভিয়েতনামের কুয়াংনি প্রদেশে অবস্থিত ১৫৫৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হা লং বে-র নীল স্বচ্ছ পানি ও চুনাপাথরের পাহাড় এর সৌন্দর্য্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।এই বে একটি প্রাকৃতিক নিসর্গ। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। হা লং বে-তে আছে সুনীল পানি আর ছোট-বড় প্রায় ২ হাজার চুনাপাথরের দ্বীপ। এতে কয়েকটি ভাসমান গ্রাম ও কৃত্রিম গুহাও আছে।
৮.ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্ক, চীন :

এই ন্যাশনাল পার্কটি চীনের হুনান প্রদেশের তিয়ানমেন পর্বতে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার পার্কটি দিনদিন পর্যটকদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। পার্কটির ১৪১০ ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে অসম্ভব সুন্দর এক কাচের সেতু তিয়ানমেন পর্বত এবং ঝাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্কের বুনো সৌন্দর্য্য ।প্রতি বছর হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক ছুটে আসে।
৯. ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ, থাইল্যান্ড :

ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ নান্দনিক সৌন্দর্য্যের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত তাই প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটকদের এই দ্বীপ ভ্রমণে আসেন।ভ্রমণকারীদের জন্য এই দ্বীপে রয়েছে ক্রুজ, ক্লিফ ডাইভিং, রক ক্ল্যাইম্বিং এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা ।সাথে বোনাস হিসেবে আছে মায়া উপসাগর। এটি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি উপসাগর। দর্শনার্থীরা সেখানে গিয়েও উপভোগ করতে পারবেন এক অন্যরকম নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
১০. সিক্রেট লেগুন, পালওয়ান, ফিলিপাইন :

ফিলিপাইনের স্বর্গ হিসাবে খ্যাত পালাওয়ান দ্বীপের সাগরে জেগে ওঠা লাইমস্টোনের পাহাড়গুলো যেন প্রকৃতির অনন্য রত্ন। পালাওয়ান দ্বীপের জাতীয় উদ্যানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এখানে রয়েছে চিত্তাকর্ষক চুনা পাথরের গুহা এবং ভূগর্ভস্থ নদী বা সিক্রেট লেগুন। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, উপত্যকা আর পাহাড়ের মায়াজালে পালওয়ান সৈকত পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১১.উইস্টেরিয়া টানেল, জাপান :

জাপানের কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে অবস্থিত উইস্টেরিয়া টানেল যেন এক প্রশান্তির জায়গা।পৃথিবীতে স্বর্গীয় অনুভুতি নিয়ে আসা উইস্টেরিয়া টানেলের সৌন্দর্য্য দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে কাওয়াচি ফুজি গার্ডেনে যেতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন এই বাগান শুধুমাত্র উইস্টেরিয়া ফুলের মৌসুমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
১২.পোখারা, নেপাল :

নেপালে সবচেয়ে সুন্দর মাউন্টেন ভিউ পেতে এ শহর অতুলনীয়।ফেওয়া লেকে জড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পোখারাকে নেপালের ভূস্বর্গ ও নেপাল রানী বলা হয়।লেক ও পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ছাড়াও ভ্রমণকারীদের জন্য পোখারায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা, প্যারাগ্লাইডিং, ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও রয়েছে পাহাড়ের চুড়ায় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্থ দেখতে পোখারায় ভীড় করেন হাজারো দর্শনার্থী।

আরও পড়ুন...