নাজমুল হুসাইন,ইবি (কুষ্টিয়া): শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে প্রগতিশীল তিন ছাত্র সংগঠন। এছাড়া একই দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার (৩১ আগস্ট) বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন এবং ঝাল চত্বরের সামনে পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে সংগঠনগুলো।
এসময় তাদের হাতে “শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির উপযুক্ত জবাব চাই, নিরাপত্তার নামে প্রহসন আর কতদিন, ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাহিরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নিরাপত্তার বুলি আর নয় বাস্তবায়ন দেখতে চাই, ইবির সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিন, শতভাগ আবাসিকতা চাই, আমার বোনের সম্মানহানীর বিচার চাই” ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।
শতভাগ আবাসন নিশ্চিত এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে বেলা ১২ টায় মানববন্ধন করেছ শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এ সময় ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ^বিদ্যালয়ে আজও সম্পূর্ণ আবাসিকতা নিশ্চিত হয়নি, এটা খুবই দুঃখজনক। আজ যদি আমাদের ক্যাম্পাসে শতভাগ আবসিকতা থাকতো তাহলে আমার বোনের সাথে এরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো না। আমাদের ক্যাম্পাসকে শতভাগ আবাসিকতার আওতায় আনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসময় শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত, সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, সংগঠনের কর্মী কামাল হোসেন, শাকিল হোসেনসহ অন্যান্যরা বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তন্ময় সাহা টনি, আল মামুন, বনি আমিন, মৃদুল হাসান রাব্বি, মামুনুর রশিদ, রকিবুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মজুমদারসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে সকাল ১১টায় মানববন্ধন করে শাখা ছাত্র মৈত্রীর নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু বলেন, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের এসব বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি। আমাদের বিশ^বিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিকতার আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে-বাহিরে সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এসময় ছাত্র মৈত্রীর ইবি শাখার দপ্তর সম্পাদক আশিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম মোরশেদ সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে দুপুরে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। এমসময় সংগঠনটির সভাপতি জি.কে সাদিক বলেন, প্রায় সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুধুমাত্র তদন্ত কমিটি করা হয়। এসব বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি। আমরা ক্যাম্পাসের ভিতরে-বাহিরে সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এসময় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক পিয়াস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী রাফী সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে স্থানীয় এক বখাটের বিরুদ্ধে। রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্যাম্পাস পাশর্^বর্তী একটি বাসাবাড়িতে টিনসেডের গোসলখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে পরদিন মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তা ও বিচার এবং ভিডিও উদ্ধার করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ওই ছাত্রী।
এছাড়া গত ২৫ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে ছাত্রীদের রুম টার্গেট করে এলাকার কিছু বখাটে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ছাত্রীদের দিকে বিভিন্ন অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে বলে জানা যায়। এর আগেও ঐ এলাকার একটি ছাত্রী মেসে বখাটেদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চার ছাত্রী।
এছাড়াও নীরাপত্তাহীরতার অভাবে গত ৬ জুন দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের ১১০ নং কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটে। হলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের প্রায় সময়ই অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। যার ফলে বহিরাগতদের হলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। জানা যায়, দিনেরবেলা এক বহিরাগত বখাটে খালেদা জিয়া হলের ভিতরে প্রবেশ করে ছাত্রীদের দিকে বিভিন্ন অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। যার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ক্যাম্পাসের সকল ছাত্রীরা।