পিবিএ,কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক রেজিস্ট্রার ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে নিয়ে কর্মচারীদের মানববন্ধনে উল্লেখ করা বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিবাদে ও কর্মচারীদের ক্ষমা প্রার্থনার দাবিতে এবার প্রশাসনিক ভাবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের শুরু থেকে ও তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান বিদ্যুৎ।
অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেয়া হয়। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান করে তারা।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া প্রাক্তণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান বিদ্যুৎ ছাড়াও রয়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল শাখার সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা দেবনাথ ও বিজ্ঞান অনুষদের সভাপতি জিলান আল সাদসহ আরো অনেকে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হাসান বিদ্যুৎ বলেন, আমরা এতদিন ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মানিয়ে নিতে চেয়েছি স্বাভাবিক কার্যক্রম চলার জন্য৷ কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি তোয়াক্কা করেনি। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি এখানে এসে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া জন্য। আমরা এতদিন তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সময় দিয়েছি। এখন আমাদের একটাই দাবী, যে কর্মচারী প্রকাশ্যে স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাজে ভাষায় মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে মানববন্ধন করেছে সে আবার প্রকাশ্যেই মানববন্ধন করে স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে হাসান বিদ্যুত নামের সাবেক এই শিক্ষার্থী কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জমিস উদ্দিনকে ‘মাস্তান’ বলে সম্বোধন করার অভিযোগ উঠে। আর এতে আক্ষেপ প্রকাশ করে কর্মচারীরা। কর্মচারী নেতারা বলেন, একজন কর্মচারীর কি মান-মর্যাদা নেই? এভাবে কটাক্ষ করে বলা হতাশাজনক।
আন্দোলনে কেউ কেউ বলেন, কর্মচারীকে একজন শিক্ষক হুমকি দিতেই পারে, ধমক দিতেই পারে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে, কাজ ঠিকভাবে না করলে তাদের হুমকি দেয়াটা যৌক্তিক।
তবে এ ব্যাপারে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সজল চন্দ মজুমদার বলেন, কর্মচারীকে হুমকি দিয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে যদি হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে এটা উচিত হয়নি।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্ল্যাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানাবে। কেউ কাউকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। প্রত্যেকের মান-মর্যাদার ব্যাপার রয়েছে। কাউকে হুমকি দিয়ে আইন ভঙ্গ করার কোনো মানে হয়না।
এদিকে, প্রশাসনিক গেটে তালা দেয়ার পর চাবি বিজ্ঞান অনুষদের সভাপতি জিলান নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলেও সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজেও ভিতরে যেতে দেননি তিনি। সাংবাদিকরা ভিতরে যেতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন জিলান। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাও কোনো প্রয়োজনে ভিতরে যেতে পারেননি। আবার ভিতর থেকে বেরও হতে পারেন নি।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, কর্মচারীদের মানববন্ধনে উল্লেখ করা বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিবাদে ও কর্মচারীদের বিচারের দাবিতে গত ২৪ আগস্ট তিন দিনের এবং ২৯ আগস্ট সাত দিনের আল্টিমেডাম দেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এই বিষয়ে প্রক্টর শিক্ষার্থীদেরকে উপাচার্যের সাথে কথা বলে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলেও তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেয়ার আগ পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ার পর দুইটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এরপর ৭ দিনের ভিতরে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে এই আশ্বাসে দুপুর সোয়া দুইটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তালা খুলে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এদিকে, ড. আবু তাহেরের পক্ষে শিক্ষক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীরকে ও সদস্য সচিব করা হয় প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে।
এছাড়াও ড. আবু তাহেরকে নিয়ে কর্মচারীদের ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে ও সদস্য সচিব করা হয় প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে।
এই বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আজ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদেরকে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে একজন কর্মচারীকে হুমকির অভিযোগ এনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় ব্যানারে ওই সাবেক রেজিস্ট্রারকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাত-শিবিরের প্রধান পৃষ্টপোষক, জামাত-শিবির ও বিএনপির নিয়োগ দাতা, সোলার ক্রয় দুর্নীতির মূল হোতা, বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত বলে অবহিত করা হয়। তার পরেই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে পালটা আন্দোলনে নামে।