কী নিয়ে আলোচনা করবেন ট্রাস্প-কিম জং

 

 

পিবিএ ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন এর সাথে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্পের সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে ভিয়েতনামে। আশা করা যায় যে, এক সময়ের প্রবল শত্রুভাবাপন্ন এই দুইজন উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র বিষয়ে কিছু একটা সমাধানে এবার আসতে পারবে। এই সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে কী ঘটতে যাচ্ছে সপ্তাহজুড়ে?

কী নিয়ে আলোচনা করবেন তারা?

গত জুনে এই দুই নেতার প্রথম ঐতিহাসিক সাক্ষাতের সময়ে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিল, এবারো সেই বিষয়টিই থাকছে আলাপের প্রসঙ্গে, আর তা হলো ‘পরমাণু অস্ত্র’। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই হয়তো চাইছে যে, উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করুক- যাকে পদ্ধতিগত ভাবে বলে- ডিনিউক্লিয়ারাইজেশন। কিন্তু উত্তর কোরিয়া একটি কথা সবসময়েই বলে আসছে, আর তা হলো যে যখন তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে আর কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে না- তখনই তারা এমন সিদ্ধান্তে যেতে পারে।

কেননা, উত্তর কোরিয়াকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাখা হয়েছে। ফলে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের সাথেই বাণিজ্য বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে তাদের। আর তাই সেসব নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসতে তারা নিশ্চয়তা চায়।

আমেরিকা আর উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কি যুদ্ধ চলছে?

কৌশলগতভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, হ্যাঁ চলছে। কোরিয়ান যুদ্ধ শেষ হয়েছে বটে , কিন্তু কোনো শান্তি চুক্তি কখনো স্বাক্ষরিত হয়নি। যুদ্ধোত্তর চুক্তির অধীনে, এখনও দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৩ হাজারের বেশী মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য আছে এবং তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাদের সাথে নিয়মিত প্রশিক্ষণ বা সেনা অনুশীলনে অংশ নিয়ে থাকে। এই আলোচনার অন্যতম ফলাফল হিসেবে কোনো একরূপে শান্তি ঘোষণা আসতে পারে, যার কিছুটা মি. কিম নিশ্চয়ই চান। সেটি হয়তো কোনো আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি হবে না- এটি হবে জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তব কিছু বিষয়ের সাথে যুক্ত।

ভিয়েতনামে কেন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বৈঠক?

কমিউনিস্ট দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সাথে ভিয়েতনামের যেমন কিছু রাজনৈতিক মিল রয়েছে তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও রয়েছে দ্বন্দ্বের ইতিহাস। উত্তর কোরিয়াকে একঘরে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ভিয়েতনামকেই আদর্শ হিসেবে দেখতে হবে। কিম হয়তো কিছু সময় দেশটির ইন্ডাস্ট্রি এবং বাণিজ্যের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।

উত্তর কোরিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সরকার পদ্ধতি বিরাজ করছে, যারা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে জনগণের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মতে দেশটিতে অন্তত ১০ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শহুরে রাজনৈতিক অভিজাতদের জীবন অনেক উন্নত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। তবে অধিকায় আদায়ে সোচ্চার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কিছুই পরিবর্তন আসেনি।

ট্রাম্প-কিম শীর্ষ সম্মেলনে মানবাধিকার ইস্যুটি আলোচনায় আসবে না। তবে তারা কিছু মানবিক বিষয়কে অনুমোদন দিতে পারে, যুদ্ধে বিছ্ন্নি পরিবারের সদস্যদের দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থায় সায় দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র কি কখনো উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করতে পারে?

তাত্ত্বিকভাবে বলা যেতে পারে যে, হ্যাঁ এটা সম্ভব। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন এটা কেবল একটা ধারণা মাত্র। কিম এবং দেশটির বর্তমান নেতৃত্বকে অপসারন করলে সেখানে হঠাৎ বিশাল অস্থিরতা দেখা দিতে পারে; যা অনিবার্যভাবে আরেকটি শরণার্থী সংকট তৈরি করতে পারে। আর উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো এসব বাড়তি খরচ এড়াতে চায় এবং অঞ্চলটির সামগ্রিক অস্থিতিশীলতার বিপক্ষে।

আর উত্তর কোরিয়ার রয়েছে পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং জৈব অস্ত্র – সেইসাথে আছে একটি বিশাল আকারের সেনাবাহিনী। যতক্ষণ না এর সবকিছু নিষ্ক্রিয় হচ্ছে, ততক্ষণ এমন ঝুঁকি নেয়া উচিৎ নয়।-বিবিসি

 

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...