কোরআনের হাফেজের মা-বাবাকে যে সম্মান দেবেন আল্লাহ

কোরআন আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগমনকারী মানব জাতির হেদায়েতের জন্য এ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। এ গ্রন্থের বিধানগুলো সব যুগে সব মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এ গ্রন্থ; (কুরআন) এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য এ (গ্রন্থ) পথ-নির্দেশক।’-(সুরা বাকারা, আয়াত, ২)

কোরআন আঁকড়ে ধরতে বলেছেন নবীজি

প্রতিটি মানুষের হেদায়েতের জন্য কোরআন অবর্তীণ করা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে শুধু তারাই সিক্ত হবে, যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। অতএব সৎপথে পরিচালিত হতে চাইলে অবশ্যই কোরআনকে আকড়ে ধরতে হবে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)।’ -(হাকেম ৩১৮, সহীহ তারগীব ৩৬)

সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি…

কোরআন ধারণের যত পদ্ধতী আছে তার একটি হলো কোরআন হেফজ করা। কোরআনের হাফেজরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী কোরআনের ধারক। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ‍ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে হাফেজদের বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৮)

কোরআন তেলওয়াতকে আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলব, তখন কুরআন তেলাওয়াত শুরু করে দিতাম।’
যে ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা করা যায়

কোরআনের হাফেজদের এতোটা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে তাদের প্রতি ঈর্ষা করারও অনুমতি রয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না।

এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তেলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সত্য ও ন্যায়ের পথে সম্পদ খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ -(বুখারি: ৫০২৬)

কোরআনের হাফেজের মা-বাবার যে সম্মান

কোরআন ও হাদিসে শুধু হাফেজদেরই মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়নি, তাদের মা-বাবার জন্যও বিশেষ সম্মানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কেয়ামতের কঠিন দিনে যখন সবাই পেরেশান থাকবে সেই মুহুর্তে তাদের আলাদা সম্মান দেওয়া হবে।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুয়াজ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে সে অনুযায়ী আমল করেছে, তাহলে তার মা-বাবাকে কেয়ামত দিবসে একটি (নূরের) তাজ (টুপি) পরানো হবে। যদি সূর্য তোমাদের ঘরে প্রবেশ করত, তাহলে ওই সূর্যের আলো অপেক্ষাও ওই টুপির আলো উজ্জ্বলতর হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে আমল করে, তার মর্যাদা ও অবস্থা কত উত্তম হবে?’ –(আবু দাউদ: ১৪৫৩; শুআবুল ঈমান: ১৭৯৭)

কোরআন তেলাওয়াতকারী আল্লাহর পরিবারভুক্ত

এছাড়া যারা কোরআন তেলাওয়াতকারী তারা আল্লাহর পরিবারভুক্ত। কোরআন তেলাওয়াতকারী জগৎ-সংসারের বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি। তাদের সুপারিশ আল্লাহতায়ালা কবুল করবেন। কোরআন তেলাওয়াতকারীর মা-বাবাকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।

হজরত ইবনে আবু তালেব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা মুখস্থ করেছে অতঃপর কোরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে এবং কোরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। যাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ -(তিরমিজি: ৫/২৯০৫)

পরকালে সুফল পাবেন মা-বাবা

সন্তানকে নেক এবং কোরআনের ধারক-বাহক বানালে এর সুফল মা-বাবা মৃত্যুর পরেও পাবেন যখন মানুষের সব ধরনের আমল বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ -(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩১০)

আরও পড়ুন...