‘কর্মসূচির নামে আক্রমণ হলে একটাকেও ছাড়বো না’

নির্বাচন ইস্যুতে বড় দুই দলকে আলোচনায় বসতে বিশিষ্টজনদের আহ্বানের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, মানিলন্ডারিং, ২১ আগস্ট আমাকে হত্যাচেষ্টা ও আইভীর হত্যাকারী খালেদা ও তারেক রহমানের সঙ্গে ডায়ালগ (সংলাপ) করতে হবে?

শনিবার (২৬ নভেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। কাদের সঙ্গে? সেই খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের সঙ্গে? যারা ২১ আগস্ট আমাকে মারতে চেয়েছিল। দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, মানিলন্ডারিংকারীদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে? আবার মানবতার কথাও বলে, সেটা কেমন কথা। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। রাজনৈতিক দল আছে, নির্বাচন কমিশন আছে, মানুষ ভোট দিতে পারছে। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভোট চোররা চুরিই জানে।

শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আমরা বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছি। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আর যেন কেউ মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা দেখা দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের এখানে সেটা যাতে না হয় সেজন্য প্রত্যেককে শাকসবজি থেকে শুরু করে যে যা পারেন, উৎপাদন করেন।

প্রত্যেককে করোনার বুস্টার ডোজ নেওয়ার অনুরোধ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, নিজে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকেন, পরিবারকেও সুরক্ষিত করেন।

বিএনপির কর্মসূচিতে সরকারের আপত্তি নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন, কোনো আপত্তি নেই। তবে একজন মানুষের ওপর আক্রমণ হলে একটাকেও ছাড়বো না। আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, সহ্য করেছি। মানুষের ওপর হামলা হলে সহ্য করবো না।

মায়েদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছেলে-মেয়েরা যাতে নিজের মনের কথা মায়ের কাছে বলতে পারে, সে পরিবেশ করতে হবে। তাহলে তারা বিপথগামী হবে না। এক্ষেত্রে মায়ের বিরাট ভূমিকা আছে, সেটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। এতে মেয়েরা চিকিৎসা পায়। মেয়েরাই চাকরি করে। সারাদেশে ৩০ হাজার নার্স ও ৪৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। দুগ্ধপানকারী মায়ের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নারীদের সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষায় ৬০ শতাংশ মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করেছি।

নারীদের ওপর বিএনপির অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে ছয় বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও রেহাই পায়নি। ঠিক একইভাবে ৭১ এ নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছিল।

ইসলাম ধর্মই একমাত্র নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। সম্পদে স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায় যারা, তারা জানে না।

তিনি বলেন, যেকোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে। সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজকে আমাদের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা ভালো করে বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।

মেয়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মেয়েরা স্বামীদের কাছে কতকিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনোকিছু দাবি করতে। বরং তিনি বলতেন, তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সবকিছু আমি দেখবো। বাবাকে যখন হত্যা করে, তখনো বলেছিলেন তাকে যেহেতু হত্যা করেছো, আমাকেও হত্যা করো।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আরও পড়ুন...