শীতকালীন খাদ্যাভাস

পিবিএ, রিফাত হোসেন: ‘শীতকাল’ বাঙালিদের মধ্যে মোটামোটি ভাবে সবারই পছন্দের একটি ঋতু বাঙালিদের কাছে শীত মানেই পিঠা পার্বনের ঋতু। শীতকালের সবচাইতে বড় আকর্ষণ হচ্ছে, খেজুরের রস। খেজুরের রসে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা। শীতকাল যেমনি অনেক আকর্ষণীয় একটি ঋতু, ঠিক তেমনি শীতকালে মানুষ অসুখ বিষুখেও আক্রান্ত বেশি হয়। ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, আ্যলার্জি, আ্যজমা, ফুসফুসে সংক্রমন ইত্যাদি ধরনের রোগে আমরা শীতকালেই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকি। অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে আমাদের ত্বক বেশি শুষ্ক থাকে। কারণ শীতকালে আমাদের দেহে পানি শূন্যতা থাকে। তাই বাড়তি পুষ্টির জন্য আমাদেরকে কিছু বাড়তি খাবারও খেতে হয়। চলুন যেনে আসি শীতকালে আমাদের কি ধরনের বাড়তি খাবার খেতে হবে।

ওটমিল : শীতকালে ওটমিল সকালে ও রাতে খাওয়ার জন্য খুবই আদর্শ একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জিংক এবং আঁশ, যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হার্টের জন্যও খুবই উপকারি। যাদের ডায়বেটিস আছে এবং যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য আদর্শ একটি খাবার হচ্ছে ওটমিল।

মাটির নিচের সবজি : শীতকাল আমাদের বাঙালিদের কাছে সবজির মৌসুম হিসেবে বেশি পরিচিত। কিছু কিছু উল্লেখ যোগ্য মাটির নিচের সবজি আছে যেগুলো শীতকালে আমাদের জন্য খুবই উপকারি। যেমন : আলু, মিষ্টি আলু, শালগম, বিট, গাজর, পেয়াজ ইত্যাদি। এসব সবজিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং আ্যন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আলু : আলু খেলে ত্বক সুন্দর থাকে, এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্ক সতেজ করে ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আলুতে ভিটামিন এ, বি কম্প্লেক্স ও আয়রন আছে।

মিষ্টি আলু : মিষ্টি আলু রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রন করে, দৃষ্টি শক্তি শক্তিশালী করে, শরীরকে সংক্রমন মুক্ত করে, ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং বলি রেখা রেখা গঠনে সহায়তা করে। মিষ্টি আলু অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং ক্যারোটিনয়েড (ভিটামিন এ এর অগ্রদূত) যেমন বিটা ক্যারোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন মুক্ত মৌলিক পদার্থগুলো নিবারণ করে।

গাজর : গাজর খেলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়, চোখের গ্লুকোমা এবং ছানি পড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, হৃদরোগ এবং কোলন ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এটি, এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইবার ক্যারোটিন রয়েছে যা মেদ কাঠাতে সাহায্য করে। গাজরে ভিটামিন সি,এ,ই,কে, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আছে।

মুলা : শীতকালীন একটি অন্যতম একটি সবজি হচ্ছে মুলা। মুলা অনেকেরই পছন্দ না। মুলায় ভিটামিন সি রয়েছে। মুলা খেলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, কোলেস্টরল কমে, ইউরিন ইনফেকশন দূর হয়।

শালগম : শালগমে ভিটামিন সি, ই এবং কে বিদ্যমান এবং এটি একটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য। ডায়বেটিস রোগিদের জন্য শালগম একটি আদর্শ খাদ্য। কারণ শালগমে ক্যালোরির পরিমান অনেক কম থাকে। শালগম আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, খারাপ কোলেষ্টেরল কমিয়ে ভাল কোলেষ্টেরল এর পরিমান বৃদ্ধি করে, ধমনীকে প্রশস্ত করে সোডিয়াম বের করে দিতে সহায়তা করে, দেহে ইলেক্টোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রক্তচাপ কমাতেও ভীষণ ভাবে সাহায্য করে শালগম।

পেঁয়াজ : পেঁয়াজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি পরিচিত একটি সবজি। মোটামোটি ভাবে সব তরি-তরকারির সাথেই আমরা পেঁয়াজ খেয়ে থাকি। এছাড়াও সালাদ হিসেবে পেঁয়াজ সালাদ হিসেবে অতি পরিচিত। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা কওে এবং এটি ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রন করে।

রসুন : রসুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি পরিচিত একটি সবজি। রসুনে রয়েছে ভিটামিন বি৬,ফসফরাস,ভিটামিন বি১,কপার,ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে এটি রয়েছে সবার শীর্ষে। প্রতিদিন সকালে ৩-৪ টুকরা রসুন গিলে খাওয়ার অভ্যাস আমাদের সকলের করা উচিৎ।

ক্রুসিফেরাস গ্রুপের সবজি : ক্রুসিফেরাস গ্রুপের সবজিগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেই বেশি পরিচিত। ব্রুকলি,ফুলকপি,বাধাকপি এই সবজিগুলো ক্রুসিফেরাস গ্রুপের মধ্যে অন্যতম। এই সবজিগুলোতে প্রচুর পরিমানে ক্যান্সার প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং এই সবজিগুলো শীতের মৌসুমে আমাদের ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতেও সহায়তা করে।

স্যুপ : স্যুপ হচ্ছে শীতকালীন অতি আদর্শ একটি খাবার। কারণ শীতকালে আমরা প্রায় সবাই পানি কম খাই তাই এই ঘাটতি পুরনের জন্য স্যুপ সবচাইতে আদর্শ খাবার। স্যুপ আমাদেরকে ডিহাইড্রেশন থেকেও মুক্তি দিতে পারে। তাই অন্তত পক্ষে শীতকালে উচিৎ আমাদের বিভিন্ন ধরনের সবজি,চিকেন বা বিফ,মাশরুম,কর্ণ,চিংড়ি,ধনেপাতা,কাঁচা মরিচি ইত্যাদি দিয়ে স্যুপ তৈরি করে খাওয়া।

টুনা মাছ : টুনা মাছে আছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড,সেলেনিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,ফসফরাস, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। টুনা মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ,কোলন ক্যান্সার,রক্তস্বল্পতা,অস্ট্রিওআথ্রাইটিস এর ঝুকি কম থাকে। এছাড়াও আমরা যারা রোদে কম বের হই তাদের ভিটামিন ডি এর চাহিদাও টুনা মাছ পুরন করবে।

ভিটামিন সি : ‘ভিটামিন সি’ সাধারনত বিউটি ভিটামিন হিসেবেই বেশি পরিচিত। ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে ভাল রাখে। সকল প্রকারের টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিনটি আমাদের ত্বককে যে কোন ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি আমাদের দেহে কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। শীতের দিনে আমাদের ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে ব্রণ,মেসতা এবং ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে থাকা। আমরা যদি শীত কালে দৈনিক আমাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত ফল গুলো রাখি, তাহলে আমরা খুব সহজেই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।

আদা ও লবঙ্গ চা : সাইনাসের সমস্যা আমাদের কম বেশি আমাদের সবারই আছে। শীতের দিনে সাইনাসের ব্যাথা অতিমাত্রায় দেখা দেয়। আদা ও লবঙ্গ চা খেলে আমরা সাইনাসের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাব। এছাড়াও শীতকালে আমাদের ভাইরাস জ্বর, জয়েন্ট পেইন এবং নানা ধরনের সংক্রামক রোগ দেখা দেয় আমরা যদি দৈনিক আদা ও লবঙ্গ চা খাই তবে এসব সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব।

তাই আমাদের সকলেরই উচিৎ অন্তত পক্ষে শীতকালে আমাদের খাদ্যাভাস বদলে ফেলা। খাদ্যাভাস বদলে ফেললেই আমরা পারব সুস্থ থেকে শীতকালটা উপভোগ করতে।

আরও পড়ুন:
শীতে ত্বক রক্ষার উপায়
জেনে নিন, ত্বক সুন্দর রাখতে ফলের ব্যবহার
জেনে নিন, টমেটোর জাদুকরী ১৩ গুণ

পিবিএ/আরএইচ

আরও পড়ুন...