জাপানি দুই শিশুর অভিভাবকত্ব: আদালতে বাবার আপিল গ্রহণ

জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার দুই সন্তান কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সেদিক বিবেচনায় রেখে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হাবিবুর রহমান ভুইয়া এ আপিল গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার মধ্যে একসঙ্গে সংসার করার বিষয়ে সমঝোতার জন্য একটি দিন ধার্য রাখবেন আদালত।

১ ফেব্রুয়ারি দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে ঢাকার জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল (পারিবারিক আপিল নং ২২/২০২৩) আবেদন করা হয়। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। ধার্য এ দিনে গ্রহণ করা হয় আপিল আবেদন।

এর আগে দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে বাবার করা মামলা খারিজ করে রায় দেন আদালত।

গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, মায়ের জিম্মায় থাকবে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো।

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে থেকে যায় জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে।

তবে ঐ দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ঐ দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

এরপর হাইকোর্টের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন ।

এরপর দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে যায়।

এসব ঘটনার মধ্যে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর দুই সন্তানের বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন...