ধনকুবের মুকেশ অম্বানী। তার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই বলিপাড়ার তারকাদের সমাগম, ভারত এমনকি বিশ্বের প্রথম সারির শিল্পপতিরাও অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত থাকেন। চারিদিকে আলোর রোশনাই। তা আরো উজ্জ্বলময় হয়ে ওঠে অম্বানী পরিবারের রাজকীয় আয়োজনে।
১৯ জানুয়ারি ‘অ্যান্টিলিয়া’য় ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মুকেশের কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত এবং ‘অ্যাঙ্কর হেল্থকেয়ার’-এর সিইও বিনোদ মার্চেন্টের কন্যা রাধিকা মার্চেন্টের আংটিবদল পর্ব। ফিরে আসে মুকেশ কন্যা ঈশার বিয়ের স্মৃতি।
২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর। ঈশা এবং তার বাল্যবন্ধু-ব্যবসায়ী আনন্দ পিরামলের বিয়ে উপলক্ষে ‘অ্যান্টিলিয়া’ সেজে উঠেছিল। এত সাজ-আড়ম্বর থাকা সত্ত্বেও চর্চায় ছিলেন ঈশা। শুধুমাত্র তিনি বিয়ের কনে ছিলেন বলেই নয়, মুকেশ-কন্যার বিয়ের সাজ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছিল। বড় বড় বলি তারকাদেরও নাকি চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল ঈশার সাজ দেখে। কারণ, ঈশার পরনে ছিল ৯০ কোটি টাকার লেহঙ্গা। দাম শুনে বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন সকলেই। এখনও পর্যন্ত কোনও বলি অভিনেত্রী বিয়ের পোশাকের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেননি। তবে, ঈশার বিয়ের লেহঙ্গায় কী এমন মণিমাণিক্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল?
কয়েকটি সংবাদ সংস্থার দাবি, ঈশা তাঁর বিয়েতে যে লেহঙ্গাটি পরেছিলেন তাতে হিরে বসানো ছিল। সোনার পাত দিয়েও কাজ করা ছিল লেহঙ্গায়। পোশাকশিল্পী আবু জানি এবং সন্দীপ খোসলা বহু ঘেরযুক্ত লেহঙ্গাটি বানিয়েছিলেন বিশেষ ভাবে। জারদৌসি পাড়ের কারুকাজ করা লেহঙ্গার উপর ফুটে উঠেছিল মুকাইশ এবং নকশির ঐতিহ্য।
ঘিয়ে রঙের লেহঙ্গার কলিগুলোতে এমব্রয়ডারির কাজও খুব সুন্দর। হাতে করা এমব্রয়ডারির এই নিপুণ কাজ নিয়ে পোশাকশিল্পীদ্বয়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন নেটব্যবহারকারীদের একাংশ। লেহঙ্গা জুড়ে যে সূক্ষ্ম ফুলের ডিজ়াইন রয়েছে তাতে সিকুইনের কাজ ধরা পড়েছে। অনেকের দাবি, এই কাজ করতে দামি পাথরও ব্যবহার করেছেন আবু এবং সন্দীপ।
লেহঙ্গার সঙ্গে ছিল দুই রকম দোপাট্টা। একটি দোপাট্টা ছিল লেহঙ্গার সঙ্গে মানানসই ঘিয়ে রঙের। অন্য দোপাট্টাটি ছিল সিকুইনের কাজ করা গাঢ় লাল রঙের। তবে, ঈশার বিয়ে উপলক্ষে ফিরে এসেছে অম্বানী পরিবারের ৩৫ বছরের পুরনো স্মৃতি। তা ফিরে এসেছে ঈশার বিয়ের পোশাকের মাধ্যমেই। ঈশার বিয়ের সাজের প্রধান আকর্ষণ ছিল ওড়নায়। ঈশার মা নীতা ৩৫ বছর আগে যখন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন, তখন পোশাক হিসাবে শাড়ি-ই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। মুকেশ এবং নীতার প্রেমকাহিনি দিয়ে মোড়ানো ছিল ঐ শাড়ি।
ঈশা তার বিয়ের সময় লেহঙ্গার সঙ্গে যে ওড়নাটি পরেছিলেন তা ছিল নীতার বিয়ের শাড়ি। ঐ শাড়ি কেটেই ওড়না বানিয়েছিলেন আবু এবং সন্দীপ। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি, ঈশা এবং আনন্দের বিয়ে উপলক্ষে ৮২৭ কোটি ৬২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল।
বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিয়োন্সে, হিলারি ক্লিন্টন, আরিয়ানা হাফিংটন, নিক জোনাসের মতো তারকা। এছাড়াও অমিতাভ বচ্চন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, শাহরুখ খান-সহ বলিপাড়ার তারকাদের জমায়েত ছিল ঈশা-আনন্দের বিয়েতে। বিয়েতে নিমন্ত্রিত অতিথিদের থাকার জন্য মুম্বইয়ে পাঁচটি বিলাসবহুল হোটেল বুক করেছিলেন মুকেশ। অতিথিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১০০টি বিমানের আয়োজন করা হয়েছিল।
বিয়ের অনুষ্ঠান মুম্বইয়ে হলেও প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রাজস্থানের উদয়পুরে। কানাঘুষো শোনা যায় যে, উদয়পুরের বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানাতে খাওয়াদাওয়ার এমন ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ৫১০০ লোকের চার দিনের খাবারের কোনও সমস্যা না হয়। এমনকি, বিয়ে উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা জানান দেওয়ার জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করা হয়েছিল। বিয়েতে অতিথিরা সেই অ্যাপ ব্যবহারও করেছেন বলে বলিপাড়ার একাংশের দাবি।
সূত্র: আনন্দবাজার