ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন। বুধবার (১ মার্চ) সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবেদকের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।
বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন বলেন, আমি হাইকোর্টের রায়ে অসন্তোষ। কারণ অভিযুক্তরা আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ও পড়ার কোনো যোগ্যতা নেই ওদের। আমি তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। ন্যায়বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমি কুষ্টিয়া আদালতে মামলা করব। মামলার প্রস্তুতি চলছে। অন্যায়ভাবে যারা আমাকে পাশবিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে দ্রুত তাদের বিচার চাই, শাস্তি চাই।
সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ইবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া। অভিযুক্ত অন্তরা ছাড়া সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ফুলপরীর বাড়ি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আদালতে বলেছেন, সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। এছাড়া নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে বিবস্ত্র করে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পরদিন ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান ওই ছাত্রী।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এতে আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি ১৮ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার শেষে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।