মোঃ হাবিবুর রহমান ,কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র স্মরণোৎসব উপলক্ষে শনিবার থেকে কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছেউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে তিনদিন ব্যাপী দোল উৎসব।
৪ মার্চ ২০২৩ ইং শনিবার সন্ধ্যায় তিনদিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন ,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম -সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ।
লালন একাডেমীর সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে , বিশেষ অতিথিঃ কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী, পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম।
উদ্ধোধনী দিনের আলোচকঃ বিশিষ্ট গবেষক ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল।
আলোচনা সভা শেষে লালন একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত রাতভর লালন সংগীত। অনুষ্টানের সব প্রস্তুতি করেছে লালন একাডেমি। ভক্ত অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছে। অনুষ্টানকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গন ধুয়ে মুছে সাফ করে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমী কর্তৃপক্ষ।
মরমী এ সঙ্গীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তাঁর সাধন-ভজনের তীর্থ স্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন পরিণত হয়েছে এখন উৎসবের পল্লীতে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব চলবে ৪ মার্চ শনিবার থেকে ৬ মার্চ সোমবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা।
কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পহেলা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন শাহ’র শেষ শয্যা রচিত হয়।
গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহ’র জীবদ্দশায় দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোল পুর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো লালন সাধু সংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণোৎসব’ হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোল পূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন।
সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোল পূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপুর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়।
চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূল মঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরও দু দিন।
তাঁরা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে।লালন স্মরনোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে প্রতিবছরই বসে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।
আয়োজকরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবারে আরও বেশী লোক সমাগম ঘটবে লালন ভক্ত অনুসারীদের। আর এ উৎসবকে নির্বিঘ্ন রাখতে কয়েক বলয়ে নিরাপত্তামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসন ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
৫ মার্চ রবিবার সন্ধায় যথারিতি আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্টান শুরু হবে। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সাংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথিঃ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য , যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
৬ মার্চ সোমবার সমাপনি দিনে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথিঃ খুলনা বিভাগীয় পুলিশের ডিআইজি মঈনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কুষ্টিয়ার ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু , স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান।আলোচকঃ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. সরোয়ার মুর্শেদ রতন।
তিন দিনের আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় লালন মেলায় চলবে, লালন সংগীত, এই লালন সংগীতের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী লালন মেলার সমাপ্তি হবে।
লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতি বছর লালনের আখড়াবাড়িতে দোলউৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ।
পবিত্র শবে বরাতের কারণে এবার শত বছরের নিয়ম ভেঙে পূর্নিমার পরিবর্তে দ্বাদশ তিথি থেকে সরকারিভাবে এ উৎসব শুরু হবে, শেষ হবে পূর্নিমার আগের দিন। লালনের মূলধারার সাধক এবং অনুসারীরা আসবেন পরম্পরা মেনে, ৬ মার্চ দোল পূর্ণিমা তিথিতে। সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করবেন এবং পরের দিন ৭ মার্চ দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করবেন সাধুসঙ্গ।
লৌকিক ভাবাদর্শের স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন। তার জীবদ্দশায় এমন ফাল্গুনের জ্যোৎস্না স্নাত রাতে বসতো দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে সাধুসঙ্গ। এই উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে, এমনি এক দোলের দিনে লালনেরর আবির্ভাব ঘটেছিলো ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে।
লালন শাহ্ মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী জানান, “লালনের মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা সামগ্রিকভাবে প্রেরণা জুগায় ভক্ত হৃদয়ে। আর, আধ্যাত্ম-সাধনার নিগুঢ় পদ্ধতি গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ছড়িয়ে পড়েছে তার গানের মাধ্যমে।